প্রতীকী ছবি
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রেমকে বিয়ের পরিণতি দিতে ধর্মান্তরিত হয়ে ছিলেন দিল্লির মুসলিম যুবক। হিন্দু ধর্মাবলম্বী স্ত্রীর ইচ্ছেকে মেনে নিয়ে বাড়ি থেকে আলাদাও থাকতে শুরু করেন তিনি। তারপরেও সেই স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে বাবা-মায়ের কাছে চলে যেতে চেয়েছেন। এনিয়ে জল গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। তবে মজার বিষয় হল, ওই গৃহবধূ নিজেই জানেন না যে তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকতে চান না। স্বামীও না থাকার কারণ জানতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঠুকেছেন। তদন্তে নেমে জানা গিয়েছে, নবদম্পতির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করেছে পুলিশ। বিয়ের পর বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই তরুণী। সেখানে দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হয়ে স্বামীর কাছে ফিরছিলেন। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত তরুণীকে রাতে একা রাস্তায় ঘুরতে দেখে টহলদার পুলিশকর্মীরা থানায় নিয়ে যান। সেখানে এক বিবৃতিতে ওই গৃহবধূ স্বামীর কাছে ফেরার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। তবে ভুলবশত রিপোর্টে বাবা-মায়ের কাছে ফেরার কথা লেখেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী। তার জেরেই প্রেমের বিয়েতেও নেমে এল বিচ্ছেদের খাঁড়া। এর পরেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় কবে ওই দম্পতি একসঙ্গে থাকার ছাড়পত্র পাবেন জানেন না।
জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ২৩ ফ্রেব্রুয়ারি মহম্মদ ইব্রাহিম সিদ্দিকি ধর্ম পরিবর্তন করে হিন্দু হয়ে যান। তাঁর নতুন নামকরণ হয় আরিয়ান আরিয়া। এরপরেই ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি প্রেমিকা অঞ্জলি জৈনকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের বিয়ে হয় ছত্তিশগড়ের রায়পুরের আর্য সমাজ মন্দিরে। হিন্দুরীতি মেনেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। তবে বিয়ের পরেও বাপের বাড়িতেই থাকছিলেন ওই তরুণী। কেননা বাড়ির লোকজন তাঁর বিয়ে ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। এরপর ৩০ জুন কোনওভাবে মন্দিরে মেয়ের বিয়ের খবর পৌঁছায় অঞ্জলির বাবা-মায়ের কারণে। আতঙ্কেই মধ্যরাতে বাপের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন ওই তরুণী। উদ্দেশ্য স্বামী আরিয়ান আরিয়ার কাছে যাওয়া। তবে রাত হয়ে যাওয়ায় পথে কোনও গাড়িঘোরা ছিল না। উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করছিলেন ওই তরুণী। টহলদার পুলিশের সন্দেহ হওয়ায় তাঁকে স্থানীয় থানায় নিয়ে আসা হয়। সেখানেই গোটা ঘটনার বিবরণ দেন অঞ্জলি। থানার কর্তব্যরত পুলিশকর্মী সেসব লিখে নিয়ে অঞ্জলিকে তখনকার মতো একটি সরকারি হোমে পাঠিয়ে দেন। সেই রাত থেকে সেখানেই রয়েছেন অঞ্জলি। এদিকে মেয়ের বিয়ের খবর জানতে পেরে আরিয়ান আরিয়ার বিরুদ্ধেও অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে তরুণীর পরিবার। রায়পুর থানার পুলিশ তদন্তে নেমে আরিয়ানকে জেরা করে। আদালতের শমন যায় তাঁর বাড়িতে। তিনি নিজেই ছত্তিশগড় হাই কোর্টে মামলা করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন পুলিশ তাঁর সঙ্গে অসহযোগিতা করছে।
এদিকে পুলিশের দাবি অঞ্জলীদেবী স্বামী আরিয়ানের সঙ্গে থাকতে রাজি নন। আদালত জানিয়ে দেয়, ২৩ বছর বয়সে নিজের ইচ্ছেয় বিয়ে করেছেন ওই তরুণী। তাই অপহরণের অভিযোগের কোনও সারবত্তা নেই। তিনি যদি স্বামীর সঙ্গে থাকতে রাজি না হন, তাহলে কোনও হস্টেলে তাঁকে পাঠানো হোক। বাধ্য হয়েই দেশের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন আরিয়ান। তিনি বুঝতে পারছিলে না অপরাধ ঠিক কোথায়। একই অবস্থা অঞ্জলীদেবীরও। প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এএম খানউইলকর ও ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি ওঠার আগে ওই তরুণী নাকি বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যেতে চেয়েছেন। এরপরেই রায়পুর থানায় দেওয়া বিবৃতিকেই উল্লেখযোগ্য তথ্যপ্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। সেখানেই ধরা পড়ে মস্ত ভুল। ৩০-জুন রাতে বাপের বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্বামী আরিয়ানের কাছে ফিরতে চেয়েছিলেন অঞ্জলি। সেই সময় কর্তব্যরত পুলিশকর্মী তাঁর বয়ানে ভুল তথ্য লেখেন। স্বামীর বদলে বাবা-মা লিখে দিতেই যত বিপত্তি। সেই ঝামেলা কাটিয়ে কবে তাঁরা একসঙ্গে থাকতে পারবেন জানেন না, আরিয়ান অঞ্জলি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.