সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘মানুষ যা বলছে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি সেরকম ভয়াবহ হলে আমি শ্রীনগর যাব।’ সোমবার কাশ্মীর সংক্রান্ত কয়েকটি মামলার শুনানির সময় এই মন্তব্য করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। ভূস্বর্গে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কাশ্মীর টাইমসের সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন, শিশু অধিকার কর্মী এণাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় ও অধ্যাপক শান্ত সিনহা।
সোমবার এই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ এই বিষয় নিয়ে সওয়াল করেন অনুরাধা ভাসিনের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। তার প্রেক্ষিতে বিচারপতি বোবদে বলেন, ‘সত্যি যদি কাশ্মীরের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়। তাহলে এই সংক্রান্ত মামলা জম্মু ও কাশ্মীর হাই কোর্টে দাখিল করতে হবে।’ এর জবাবে বৃন্দা গ্রোভার জানান, জম্মু ও কাশ্মীরে ইন্টারনেট ও সরকারি পরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাই সেখানকার বাসিন্দাদের পক্ষে জম্মু ও কাশ্মীর হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
এরপরই শুরু হয় শিশু অধিকার কর্মী এণাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় ও অধ্যাপক শান্ত সিনহার দায়ের করা মামলার শুনানি। তাঁরা উল্লেখ করেন, কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকেই অবৈধভাবে শিশুদের আটকে রাখা হচ্ছে। ১৮ বছরের নিচে থাকা নাবালক যাদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের যেন ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানান, এই বিষয়ে মামলা দায়ের করতে হলে তা যেন জম্মু ও কাশ্মীর হাই কোর্টে জানানো হয়। কিন্তু, শিশু অধিকার কর্মীদের আইনজীবী জানান, কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তাঁর মক্কেলরা হাই কোর্টে যেতে পারছেন না।
এই কথা শুনেই কাশ্মীর যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, আপনি যদি বলেন যে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাহলে এটা খুব গুরুতর অভিযোগ। আপনি আমাকে বলুন যে কেউ কি হাই কোর্ট যেতে আপনাকে বাধা দিচ্ছে? যদি এটা সত্যি হয় তাহলে কেন? এরপরই আইনজীবীরা ডিভিশন বেঞ্চকে জানান, কাশ্মীরের বর্তমান অবস্থার জন্য হাই কোর্টে যেতে পারছেন না মানুষ। তাঁদের এই কথা শুনেই জম্মু ও কাশ্মীর হাই কোর্টের কাছে এই বিষয়ে রিপোর্ট তলব করেন প্রধান বিচারপতি। বলেন, ‘মানুষ যদি জম্মু ও কাশ্মীর হাই কোর্টে মামলা না করতে পারেন তাহলে সেটা খুবই গুরুতর বিষয়। তাহলে আমিই শ্রীনগর যাব।’
আবেদনকারীদের আইনজীবীরা বলেন, ‘হাই কোর্টে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে উঠেছে।’ তখন সুপ্রিম কোর্ট জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। আবেদনকারীদের এক আইনজীবীকে বলেন, ‘মানুষ যদি হাইকোর্টে না যেতে পারে, তাহলে তো পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। আমি নিজে শ্রীনগরে যাব। তবে জম্মু ও কাশ্মীর হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির পাঠানো রিপোর্ট যদি অন্যরকম হয়। তাহলে তার পরিণতির জন্য তৈরি থাকবেন।’
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে কাশ্মীর সংক্রান্ত আবেদন শোনে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের এক বেঞ্চ। এতে রঞ্জন গগৈই ছাড়াও ছিলেন বিচারপতি এস এ বোবদে এবং বিচারপতি এস এ নজর। এই বেঞ্চে কাশ্মীর সংক্রান্ত অনেকগুলি আবেদন জমা পড়েছিল। কাশ্মীর টাইমসের সম্পাদক ও দুই শিশু অধিকার কর্মী-সহ মামলা করেছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন জানিয়েছিলেন জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস কনফারেন্সের নেতা সাজ্জাদ লোন। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাকে কোর্টে হাজির করানোর আবেদন জানিয়ে গিয়েছিলেন এমডিএমকে নেতা ভাইকোও।
তার মধ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদকে কাশ্মীর যাওয়ার অনুমতি দেয় তিন সদস্যের বেঞ্চ। জম্মু, বারামুলা, অনন্তনাগ ও শ্রীনগরে যেতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন গুলাম নবি আজাদ৷ সেই আবেদনকে মান্যতা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, গুলাম নবি কাশ্মীর যেতে পারবেন৷ কিন্তু, কোনও মিছিল বা জনসভা করতে পারবেন না৷ পাশাপাশি কাশ্মীর থেকে ঘুরে আসার পরে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি রিপোর্ট দিতে হবে তাঁকে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.