দিব্যেন্দু মজুমদার: সৈকত রাজ্য গোয়া দখলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তৃণমূল (TMC)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee), অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) একাধিকবার গিয়েছেন সেখানে। তৃণমূলের পোস্টারে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে গোয়া। তাতে লেখা, “জোড়া ফুল আগামীতে গোয়ায় নতুন সকাল নিয়ে আসবে।” কিন্তু গোয়ার ভোট যুদ্ধে কতটা এগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল? কী বলছেন সেখানকার বাসিন্দারা?
গোয়াবাসীর বক্তব্য, শুধু স্লোগানে হবে না। যার কাছ থেকে সাধারণ মানুষ আগামিদিনে বেশি সুযোগ-সুবিধা পাবে, তাঁরাই ওই রাজ্যের ক্ষমতায় আসবে। সেক্ষেত্রে তাঁরা এটাও স্বীকার করেছেন যে, যার হাতে পয়সা বেশি থাকবে, তার হাতেই স্টিয়ারিং থাকবে গোয়ার। ওই রাজ্যের মানুষ জানেন, সেখানকার অর্থের মূল উৎস হল ক্যাসিনো, মাছের আন্তর্জাতিক বাজার ও পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হোটেল-রেস্তরাঁ।
গোয়ার (Goa) প্রাণকেন্দ্র পানাজি শহরকে কেন্দ্র করে মাণ্ডভী নদীর উপর বোটে সাত থেকে আটটি এবং রাস্তার উপর পাঁচ থেকে ছয়টি হোটেলে ক্যাসিনো আইনত স্বীকৃত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, প্রত্যেকটি ক্যাসিনোতে দিনে সবচেয়ে কম করে হলেও ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। পর্যটন মরসুমে সেই ব্যবসা দিনে ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। গোয়া সরকারের এই ক্যাসিনো থেকে বছরে একটা মোটা অংকের অর্থ রাজস্ব হিসেবে আদায় হয়। তাই সাধারণ নাগরিক মনে করেন, যার হাতে এই অর্থ থাকবে তাঁরা কিছুটা হলেও একটু বেশি সুবিধা পাবে।
সম্প্রতি তৃণমূল সুপ্রিমো ‘গৃহলক্ষ্মী প্রকল্পে’ প্রত্যেক মহিলাকে মাসিক ৫ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করার পরই কিছুটা হলেও রাজ্যের শাসক দল সমস্যায় পড়েছেন। ইতিমধ্যে গোয়ার বিভিন্ন শহর ও সৈকত নগরীতে এই ‘গৃহলক্ষ্মী প্রকল্পে’র বড় বড় হোর্ডিং মানুষের নজর কেড়েছে। গোয়াবাসী মহিলারা জানিয়েছেন, বর্তমান শাসকদল মহিলাদের মাসিক ২ হাজার টাকা অনুদান দেয়। সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি তাঁদের মাসিক ৫ হাজার টাকা করে দেন, তবে মহিলাদের একটা বিরাট অংশ তৃণমূলের সঙ্গে থাকবে।পাশাপাশি তাঁরা জানিয়েছেন, বর্তমান শাসকদল আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর পরিবারগুলির মেয়ের বিয়ের জন্য এক লক্ষ টাকা অনুদান দেয়। সেক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসার জন্য এই অনগ্রসর শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা গুলোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে তৃণমূলকে।
গোয়ার সমুদ্র সৈকতের আকর্ষণে বহু পর্যটক ভিড় জমান। রাজ্যজুড়ে সৈকত নগরগুলোতে এখন জোড়া ফুলের বড় বড় পোস্টার এবং ব্যানার। এই রাজ্যে প্রায় ১৫০ টিরও বেশি ভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু গোয়ার সাধারণ মানুষের পাতে সেই মাছ খুব একটা বেশি জোটে না। কারণ, মাছের আকাশচুম্বী বাজার দর। হোটেলে এক পিস মাছের দাম কম করে দু’শো টাকা গুনতে হয়। চিংড়ি, কাঁকড়া ধরাছোঁয়ার বাইরে। গোয়ার সাধারণ মানুষ জানান, এখানে বহু নেতার নিজস্ব ট্রলার রয়েছে। সেই ট্রলারে করে গোয়া ছাড়াও ভিন রাজ্যের এমনকী পশ্চিমবঙ্গের বহু মৎস্যজীবী মাছ ধরতে যান। কিন্তু সেই মাছ রাজ্যবাসী হিসেবে তাঁরা চোখে দেখতে পান না। ওই মাছের সিংহভাগই চলে যায় বিদেশে। পরে বিদেশ থেকে সেই মাছ আমদানি হয়ে গোয়ার বিভিন্ন হোটেলের হেঁশেলে স্থান পায়। তারা অনেকেই দাবি করেছেন রাজ্যবাসী হিসেবে তাঁরা নিজের রাজ্যের মাছের স্বাদটুকু পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারেন না অত্যধিক দামের জন্য। দিদি সাধারণ মধ্যবিত্তের হেঁশেলের দিকে যদি নজর দেন তবে গোয়াবাসী তাঁকে দুই হাত তুলে আশীর্বাদ করবেন। সরকারি, বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, হোটেল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রত্যেকেরই একটাই আবেদন জীবন জীবিকার স্বার্থে দৈনন্দিন জীবনে অন্তত ন্যূনতম চাহিদার দিকে নজর দিক রাজনৈতিক দলগুলি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.