সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অপ্রত্যাশিত হার। উপ নির্বাচনের ফলাফলেও ইঙ্গিত মেলেনি। ঠিক কোথায় যে ভুল হয়ে গেল, তা এখনও ভেবে উঠতে পারছেন না বাম সমর্থকরা। রাজ্যের মানুষের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর যে তুমুল গ্রহণযোগ্যতা তা কী করে রাতারাতি মিলিয়ে যেতে পারে! রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশও বেশ স্তম্ভিত। তবে এই পরিস্থিতিতেও হাল ছাড়তে নারাজ ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। সরকার গিয়েছে। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য শুধু সরকারের কার্যাবলীতে সীমাবদ্ধ নয়। আর তাই পরাজয়ের পরদিনই জানিয়ে দিলেন, সাধারণ মানুষের হয়ে, সর্বহারার জন্য যে লড়াই তিনি করছিলেন, তা আজীবন করে যাবেন।
[ পদ্ম রুখতে একজোট হাতি-সাইকেল, নয়া সমীকরণ উত্তরপ্রদেশে ]
শনিবারের ত্রিপুরায় যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসের একটি দৃশ্যেরই পুনরাবৃত্তি হল। এক দ্বার দিয়ে ঢুকছেন নক্ষত্রমাণিক্য। অন্য দ্বার দিয়ে নীরবে চলে যাচ্ছেন গোবিন্দমাণিক্য। কেউ তাঁর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। সমাদর করছে না। ঠিক একইভাবে একপথ দিয়ে ফিরে যাচ্ছেন প্রায় আড়াই দশক ক্ষমতায় থাকা মানিক সরকার। আর লাল গড়ে এক এক করে ঢুকছেন বিজেপি নেতারা। লাল আবির মিলিয়ে যাচ্ছে অন্তরালে। আকাশ ছেয়েছে গেরুয়া রঙে। ত্রিপুরার অধিকাংশ মানুষও বুঝে উঠতে পারেননি যে এমত হাল হবে সিপিএমের। বস্তুত শতাংশের নিরিখে মোটে ৫ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছে বিজেপি। এখনও বহু মানুষ মানিকবাবুকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। তবু কোথাও একটা গরমিল রয়েছে হিসেবে। কেউ কেউ বলছেন দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে জনসংযোগ হারিয়েছিলেন মানিকবাবু। কেউ বলছেন, আদিবাসীদের প্রতি আরও নজর দেওয়া উচিত হল। কিন্তু আদ্যন্তে সৎ, দেশের দরিদ্রতম মুখ্যমন্ত্রীকে মানুষ হিসেবে যে সকলেই শ্রদ্ধা করেন তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। ভোটের ফলাফলে তাই অনেকেই চমকে গিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী পরাজয়ের পর প্রায় মিলিয়েই গিয়েছে বামশক্তি। অন্তরালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। একই পথ কি ধরবেন প্রবীণ কমরেড মানিক সরকার। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর লড়াই থেমে থাকবে না। গরিব-সর্বহারাদের জন্য তিনি এখনও তাঁর লড়াই চালিয়ে যাবেন। কেননা শুধু ত্রিপুরা আর সরকারের মধ্যেই তাঁর কাজ সীমাবদ্ধ নয়।
[ গেরুয়া বাড়ন্ত, অগত্যা লাল আবির মেখে বিজয় উৎসব ত্রিপুরা বিজেপির ]
গতকালই ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ এনেছিলেন। তথ্যে ভ্রান্তি আছে বলে জানিয়েছিলেন। এদিন তিনি জানান, এ বিষয়ে পরে আরও বিস্তারিত ও ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হবে দলের মধ্যে। তবে বিজেপি যে অর্থ ও শক্তির প্রয়োগ করে ক্ষমতা করায়ত্ত করেছে সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। ভোটে জয়-পরাজয় নিছকই অঙ্কের বিষয়। তবে সংখ্যাতত্ত্ব ছাপিয়ে থেকে যায় ব্যক্তি মানুষের জায়গা। সেখানে গোটা দেশেই দলমত নির্বিশেষে শ্রদ্ধার আসনে মানিকবাবু। এই পরাজয়ে তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে হয়তো একটা নতুন দিকে মোড় নিল। কিন্তু সর্বহারার লড়ার চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়ে মানিকবাবু বুঝিয়ে দিলেন, নির্বাচনে পরাজয়েই বামপন্থীর কর্মসূচি ফুরিয়ে যায় না। পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের সঙ্গে এখানেই বোধহয় ফারাকটা বুঝিয়ে দিলেন প্রবীণ এই নেতা।
[ নজরকাড়া সাফল্য, চা বিক্রি করেই মাসে উপার্জন ১২ লক্ষ টাকা ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.