কাশ্মীরের মসজিদ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, 'ইসলাম গ্রহণ কর, নয় রাজ্য ছাড়।'
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ত্রিশ বছর আগের সেই অভিশপ্ত রাতের কথা মনে পড়ছে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের। যেদিন লাউড স্পিকারে কাশ্মীরের মসজিদ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, ‘হয় কাশ্মীরি পণ্ডিতরা রাজ্য ছাড়ো নয় ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হও, আর এই দুটির কোনওটাই যদি না করো তবে বেছে বেছে প্রত্যেক কাশ্মীর পণ্ডিত পরিবারের পুরুষ সদস্যদের প্রাণে মেরে ফেলা হবে…’। এই ঘোষণা আর তার পরবর্তী হিংসা আর খুনের ঘটনার পর লক্ষাধিক কাশ্মীরি পণ্ডিত প্রাণ বাঁচাতে প্রায় নিঃস্ব হয়ে কাশ্মীর ছেড়েছিলেন। সেই অনৈতিক উচ্ছেদের বিচার হল আজ-বলছেন দেশজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছিন্নমূল কাশ্মীরি পণ্ডিতরা।
“এই দিনটার জন্য কবে থেকে অপেক্ষা করে আছি। অবশেষে ঘরে ফিরতে পারব। কাশ্মীর আমাদের। আমরাই সেখানকার আদি বাসিন্দা। আশা করছি, সরকার শীঘ্রই আমাদের নিজভূমে ফেরার পথ প্রশস্ত করবে। আর যেহেতু কাশ্মীর এখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, তাই কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে নিরাপত্তা নিয়েও আর ভয় পেতে হবে না আমাদের।” জানিয়েছেন, আর কে মাট্টু। বেঙ্গালুরুর কাশ্মীরি হিন্দু কালচারাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সভাপতি মাট্টু। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “কয়েকটি পরিবার এই ধারার সমস্ত সুবিধা নিজেদের জন্যই সরিয়ে রেখেছিল। ভেবেছিল কাশ্মীর তাদের পৈতৃক সম্পত্তি, যাকে কেউ ছুঁতে পারবে না। কিন্তু, ছোঁয়া যে যায়, তা আজ দেখিয়ে দিল সরকার।” মাট্টুর মতে কাশ্মীর এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল, যেখানে ভারতবিরোধী স্লোগান দিলেই টাকার বন্যা বয়ে যায়। আর এই টাকা ছড়াত দেশবিরোধী শক্তিরা। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে কেন্দ্রের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সেই সমস্যাকেও মেটাবে।
“সোজা কথায়, এবার আমরা প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার আশা করতে পারি। বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপকে দু’হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানাচ্ছি আমরা। আশা করছি, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে কাশ্মীরে শান্তি ফিরবে।” জানিয়েছেন দেশের সমস্ত ছিন্নমূল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের প্রতিষ্ঠান অল স্টেট কাশ্মীরি পণ্ডিত কনফারেন্সের সভাপতি রবীন্দ্র রায়না।
১৯৯০ সালে জম্মু-কাশ্মীরে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস শুরু হওয়ার পর যখন কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বেছে বেছে হত্যা করা শুরু হল, তখন অজস্র কাশ্মীরি পণ্ডিত প্রাণ হারিয়েছিলেন। প্রাণ বাঁচাতে ভিটেমাটি হারিয়েছিলেনও বহু। সেসময় কাশ্মীরে বসবাসকারী দু’লক্ষের বেশি হিন্দু পণ্ডিতের অর্ধেকের বেশি ঘরবাড়ি, জমি-সম্পত্তি ছেড়ে চলে আসেন দেশের অন্যান্য রাজ্যে। সে কথাই মনে করিয়ে দিয়ে বাস্তুচু্যত কাশ্মীরী হিন্দুদের আরেক সংস্থা পানুন কাশ্মীরের সভাপতি ডা. অজয় চুরাঙ্গু বলেছেন, “৩৭০ ধারার সুবিধা নিয়ে কাশ্মীর আরেকটি ইসলামিক স্টেটে পরিণত হতে চলেছিল। বিজেপি সরকার তা থেকে বাঁচিয়ে দিল। এই প্রথম এই মর্মে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করল দেশের সরকার। যা কাশ্মীরে নতুন যুগের সূচনা করবে। আর তাই ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।”
১৯৯০-এর সেই অশান্ত সময়ে কাশ্মীরি হিন্দুদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে বড় ছেলেকে হারিয়েছিলেন পিএল টিকু। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর তিনি জানিয়েছেন, “আমার সন্তানকে আমি আর ফিরে পাব না। আমার স্ত্রী পুত্রশোক সহ্য করতে না পেরে মারা গিয়েছেন। কাশ্মীরে আমি আমার ফলের বাগান, পৈতৃক ভিটে, অন্য সব সম্পত্তি ছেড়ে এসেছি। শুনেছি সেসব বেদখল হয়ে গিয়েছে। ফিরে পাওয়ার আশা রাখি না। তবে কাশ্মীর নিয়ে সরকারের এই পদক্ষেপ আমাকে আশা জুগিয়েছে। আশা করব, তা কার্যকর হলে কাশ্মীর ক্রমশ ধ্বংসের পথ থেকে সরে আসবে। হয়তো কোনও দিন নিজের পুরনো বাড়িতে ফিরেও যেতে পারব আমি। কে বলতে পারে। ৩৭০ ধারা নিয়ে এই সিদ্ধান্ত নতুন করে ভাবাচ্ছে আমার মতো অনেককেই।”
[আরও পড়ুন: গৃহবন্দিত্ব থেকে সোজা বন্দিদশা, ৩৭০ বিলুপ্তির পরই গ্রেপ্তার আবদুল্লা-মুফতি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.