সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়েও হেঁটে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেছিলেন। কিছুটা হাঁটার পর রাস্তাতেই সন্তানের জন্ম দিলেন পরিযায়ী শ্রমিকের স্ত্রী। তবে মনের জোরের কাছে হার মেনেছে ক্লান্তি। সন্তান জন্ম দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে আবারও হাঁটতে শুরু করেন ওই মহিলা। যদিও পরিস্থিতি বিচার করে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছনোর বন্দোবস্ত করে দেয় পুলিশ।
নিজের এলাকায় উপার্জন নেই। তাই জোটে না পেট ভরার মতো খাবার। বাধ্য হয়ে একটু বেশি অর্থ উপার্জনের আশায় নাসিকে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানেই দিব্যি চলছিল কাজ। কিন্তু লকডাউনেও ভিনরাজ্যে আটকে পড়েন। কাজ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টান পড়ে পেটে। তাই বাধ্য হয়ে সাতনায় বাড়ি ফেরার জন্য হাঁটতে শুরু করেন একদল পরিযায়ী শ্রমিক। ১৬-১৭ জনের সেই দলে শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ কে নেই!
সেই দলেই ছিলেন শকুন্তলা নামে এক মহিলা। তিনি ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ততদিনে গর্ভের সন্তান জানান দিতে শুরু করেছে এবার বাইরের জগৎ দেখার সময় হয়েছে তার। কিন্তু হবু মা ভাবতে থাকেন সন্তান জন্ম দেওয়ার আগে বাড়ি ফিরলে ভাল হয়। তাই তো কষ্ট করেও হাটতে থাকেন তিনি। কিন্তু গর্ভস্থ সন্তান মায়ের কথা শুনল না। পরিবর্তে রাস্তাতেই জন্ম নিল সে। পরিযায়ী মহিলা শ্রমিকদের সাহায্যেই সন্তানের জন্ম দেন শকুন্তলা।
ওই মহিলা দমে যাওয়ার পাত্রী নন। তাই তো সন্তান জন্মের পর আবারও হাঁটতে শুরু করলেন তিনি। কোলে সদ্যোজাত। মহারাষ্ট্র-মধ্যপ্রদেশ সীমান্ত লাগোয়া সেন্ধওয়ার কাছে আসার পর পুলিশের নজরে পড়েন ওই পরিযায়ীরা। শকুন্তলার কোলের সন্তান যে সবে সবেই পৃথিবীতে এসেছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি পুলিশের। তড়িঘড়ি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তাঁরা। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং খাবারদাবারের ব্যবস্থা করেন পুলিশকর্মীরা। এছাড়াও ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের দলে থাকা যে শিশুরা খালি পায়ে হাঁটছিল, তাদের জন্য জুতোরও বন্দোবস্ত করে পুলিশ। শকুন্তলার সন্তান জন্ম দেওয়ার আগের লড়াইয়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যান তাঁরা।
শকুন্তলার স্বামী বলেন, “শুধু পুলিশই নয়। রাস্তায় আমাদের একটি শিখ পরিবারও সহযোগিতা করেছে। আমার দুধের সন্তানের জন্য পোশাকের বন্দোবস্ত করেছে। কিছু অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীও দিয়েছেন তাঁরা। আমরা সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।” পরিযায়ী শ্রমিকদের এরপর বাসে চড়িয়ে বাড়ি ফেরার বন্দোবস্ত করে দেন পুলিশকর্মীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.