সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছোটবেলার ভাল বন্ধু৷ এরপর যে কখন বন্ধুত্ব প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হল বুঝে উঠতে পারেননি কেউ৷ একসঙ্গে সংসার করতে করতেও কেটে গিয়েছে অনেকগুলি বছর৷ জীবনে এসেছে নানা চড়াই উতরাই৷ হাত ছাড়েননি একে অপরের৷ বরং যত সময় কেটেছে, ভালবাসার বাঁধন আরও শক্ত হয়েছে৷ নতুন করে পরস্পরের কাছে এসেছেন তাঁরা৷ সাধারণতন্ত্র দিবসে অশোক চক্র সম্মান নিতে গিয়ে বারবারই শহিদ ল্যান্সনায়েক নাজির আহমেদ ওয়ানির সঙ্গে দীর্ঘ বছরের সম্পর্কের নানা কথা মনে পড়ছে তাঁর স্ত্রীর৷
খুবই অল্প বয়সে ইখনওয়ান-এ-মুলক এর মতো জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হয়ে গিয়েছিলেন নাজির আহমেদ ওয়ানি৷ কিন্তু ২০১৪ সালে তাঁর জীবনের মোড় বদলায়৷ জঙ্গি দল ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন দেশের সেনাবাহিনীতে। ভারতীয় সেনার ১৬২ নম্বর টেরিটোরিয়াল ব্যাটালিয়নের সদস্য হয়ে যান নাজির। গত ২৫ নভেম্বর ৩৪ নম্বর রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের জওয়ানদের সঙ্গে অনন্তনাগের বাতাগুন্দ গ্রামে অভিযানে যান তিনি। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র-সহ সেখানে হিজবুল মুজাহিদিন ও লস্কর-ই-তইবার ৬ জঙ্গি আস্তানা গেড়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে আগাম খবর মেলে। সেই মতো অভিযান শুরু হয়। বহুক্ষণ ধরে গুলি বিনিময় হয় জঙ্গি ও জওয়ানদের মধ্যে। গোলাগুলি চলাকালীন নাজির আহমেদ ওয়ানির গুলিতে নিহত হয় এক জঙ্গি। নাজিরের পেটে, হাতে গুলি লেগেছিল। কিন্তু জঙ্গিরা পালানোর চেষ্টা করলে, সেই অবস্থাতেই রুখে দাঁড়ান তিনি। এক জঙ্গির সঙ্গে ভোজালি ও বেয়নেট নিয়ে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায় তাঁর। তাতে ওই জঙ্গির মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম হন নাজিরও। সেই অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয় তাঁর। ৭০তম সাধারণতন্ত্র দিবসে প্রাক্তন জঙ্গিকে অশোক চক্র সম্মানে সম্মানিত করা হয়৷ এদিন তাঁর স্ত্রী মহাজাবিন রাষ্ট্রপতির হাত থেকে স্বামীর মরণোত্তর সম্মাননা গ্রহণ করেন৷
দুই সন্তান রয়েছে শহিদ জওয়ান নাজির আহমেদ ওয়ানির৷ তাঁর স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা৷ অশোক চক্র সম্মান হাতে নেওয়ার আগে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন শহিদের স্ত্রী৷ তিনি বলেন, ‘‘যেদিন খবর পেয়েছিলাম নাজির মারা গিয়েছেন, সেদিন একটুও কাঁদিনি৷ নাজির বরাবরই লড়াকু স্বভাবের৷ সমাজ পরিবর্তন করাই মূল লক্ষ্য ছিল তাঁর৷’’ গলার কাছে দলা পাকানো যন্ত্রণা স্পষ্ট৷ তবে চোখে জল আনা যেন বারণ শহিদের স্ত্রীর৷ কারণ নাজিরকে ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী৷ আর স্ত্রীকে লড়াই করে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা দিয়েছিলেন শহিদ জওয়ান৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.