সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেখতে দেখতে ২৪ বছর পূর্ণ হবে কার্গিল যুদ্ধের। প্রায় দু’যুগ আগে এই সময়ই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে ঐতিহাসিক জয় ছিনিয়ে এনেছিল ভারতীয় সেনা। দেশমাতৃকাকে রক্ষা করতে শহিদ হয়েছিলেন ভারতের ৫২৭ জন বীর জওয়ান। তাঁদের এই বলিদানকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতি বছর ২৬ জুলাই পালিত হয় ‘কার্গিল বিজয় দিবস’।
কিন্তু কেন কার্গিলে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তান? ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানের লক্ষ্য কাশ্মীর। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করেই ভারত-পাকিস্তানের সংঘাত। যা প্রথম ভারত-পাক ‘কাশ্মীর যুদ্ধের’ রূপ নেয় ১৯৪৭ সালে। সেই যুদ্ধে ভারতের কাছে হেরে যায় পাকিস্তান। এরপর ১৯৬৪ সালে আবারও যুদ্ধ বাঁধে দুই দেশের। সেবারও পরাজিত হয় পাক। কয়েক বছরের মধ্যেই ১৯৭১ সালে ফের লড়াই বাঁধে দু’দেশের মধ্যে। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ হয় বাংলাদেশের। ওই যুদ্ধেও ভারতের কাছে হেরে যায় পাকিস্তান। পরপর হারের জ্বালা সইতে না পেরে কাশ্মীর দখল নিয়ে আরও জেদি হয়ে ওঠে পাকিস্তান। ক্রমেই চাপানউতোর বাড়তে থাকে সীমান্তে। ভারত সব সময়ই চেয়ে এশেছে শান্তিপূর্ণ সমাধান। কিন্তু পাকিস্তান শান্তির পথে না গিয়ে বারবার আক্রমণ করেছে ভারতকে। আর ততবারই মুখ থুবড়ে পড়েছে।
কার্গিল নিয়েও আন্তর্জাতিক স্তরেই আলোচনা বজায় রেখেছিল তৎকালীন বাজপেয়ী সরকার। কিন্তু ধৈর্য রাখতে পারেনি পাকিস্তান। ১৯৯৯ সালে রীতিমত পরিকল্পনা করে তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফের নেতৃত্বে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অফ কন্ট্রোল লঙ্ঘন করে ঢুকে পড়ে কাশ্মীরের কার্গিলে। পাকিস্তানের উদ্দেশ্য সহজেই বুঝে ফেলে ভারত। এরপরই শুরু হয় তুমুল লড়াই। যা রূপ নেয় ঐতিহাসিক কার্গিল যুদ্ধের।
পাকিস্তান এই সংঘাতের নাম দেয় ‘অপারেশন বদর’। ভারত নাম রাখে ‘অপারেশন বিজয়’। শত্রুপক্ষকে পরাস্ত করতে প্রায় ৩০ হাজার জওয়ান কার্গিল সীমান্তে মোতায়েন করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। এই লড়াইয়ে রক্ত ঝরে দু’পক্ষেরই।
মাসখানেক ধরে চলে দু’দেশের রক্তক্ষয়ী সংঘাত। অবশেষে আসে সেই ঐতিহাসিক দিন। ২৬ জুলাই। নিজেদের মাটিতে ভারত পরাস্ত করে পাকিস্তানকে। ভারতের শক্তির কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয় শত্রুপক্ষ। তবে এই জয় সহজে আসেনি। ভারতীয় সেনার ৫২৭ জন বীরের বলিদানের কাহিনী আজও স্বর্ণাক্ষরে ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে। তাই এই দিনটি একদিকে যেমন আনন্দের অন্যদিকে দুঃখেরও। কিন্তু যখনই কার্গিল যুদ্ধের প্রসঙ্গ ওঠে তখন বারে বারে এই অমর জওয়ানদের স্মরণ করে গর্বে মাথা উঁচু হয় সকল ভারতবাসীর।
১৯৯৯ সালের পর থেকেই ২৬ জুলাই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী ভারতের প্রতিটি কোণায় গর্বের সঙ্গে পালিত ‘কার্গিল বিজয় দিবস’। প্রতি বছর এই দিনে দিল্লিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক বছর ২৬ জুলাই ইন্ডিয়া গেটের সামনে অমর জওয়ান জ্যোতিতে কার্গিল যুদ্ধের নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.