সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এতদিন যাঁর শক্ত কাঁধে দলের দায়িত্ব ছিল, এবার তিনিই মোদি মন্ত্রিসভায় নাম্বর টু। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই নরেন্দ্র মোদির অন্যতম ভরসার জায়গা অমিত শাহ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে মোদি-শাহ জুটির এই রসায়নই ধরাশায়ী করে দিয়েছে বিরোধী মহাজোটের গাণিতিক সমীকরণকে।রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে মায়া-মমতা-অখিলেশ, কার্যত ল্যাজে-গোবরে অবস্থা বিরোধীদের। তাই জয়ের কারিগর অমিত শাহকে যে নয়া ক্যাবিনেটে আনা হবে, তা জানাই ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বও যে তিনিই পাবেন তাও একপ্রকার সকলেই আঁচ করতে পেরেছিলেন।
তবে শুধু কি প্রতিদান দিতেই অমিত শাহকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করেছেন নরেন্দ্রভাই দামোদরদাস মোদি? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের উত্তর, ‘একদমই না’। একাধিক কারণে শাহকে ‘ঘর সামলানো’র দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লির অলিন্দে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর পর সব থেকে বেশি ক্ষমতাবান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার গোটা পরিকাঠামোই থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে। ফলে প্রকারান্তরে গোটা দেশে চলা গতিবিধির উপর নজর থাকবে ভারতীয় রাজনীতির ‘নতুন চাণক্য’র।গুজরাটেও মোদি জমানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বিজেপি সভাপতি। ইশরাত জাহান এনকাউন্টার মামলায় মোদি-শাহকে নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। গোধরার দাগ মুছে গুজরাট থেকে দিল্লির সফরও সহজ ছিল না। এ তো গেল মুদ্রার একদিক। অন্যদিকে বিতর্ক বাড়লেও উন্নয়নে দেশের কাছে গুজরাট ‘মডেল স্টেট’ হয়ে উঠেছিল। ‘মোদিনমিক্স’ ও ‘শাহ-ট্রিকস’-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন অনেকেই।পাশাপাশি গোধরা পরবর্তী আগুনে ‘হিন্দু-ত্রাতা’ হিসেবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে মোদির ভাবমূর্তি। এরপর ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসেন মোদি। বাকিটা ইতিহাস।
প্রথম মোদি সরকারের সময় রাজনাথ সিং ও অরুণ জেটলির মধ্যেই ছিল নম্বর ২ হওয়ার প্রতিযোগিতা। কারণ ততদিন বিজেপির অন্দরেও মোদি বিরোধীদের একটা গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল। পরের পাঁচ বছর আডবানী থেকে মুরলীমনোহর যোশীর ব্যাকফুটে চলে যাওয়া ও নীতীন গড়করির ক্ষমতা খর্ব হওয়াই দলে অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারি হয়ে ওঠেন মোদি। আর ২০১৯-এর লোকসভার পর বিজেপির কাছে মোদি এখন ‘সুপারম্যান’। তাঁর বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও সাহস করবে না বিক্ষুব্ধরা।ফলে শাহকে আসরে নামানো এবার জলভাত। অনেকেই মনে করছেন, অ-বিজেপি রাজ্যগুলি বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গকে টার্গেট করেছে গেরুয়া শিবির। তাই ‘উদ্দেশ্য’ পূরণ করতে ফের একবার শাহ’র ‘কূটনীতি’র আশ্রয় নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও একটি রাজ্য সামলানো ও দেশ চালানো এক নয়। এবার মোদি-শাহ’র যুগলবন্দি কী খেল দেখাবে তা সময়ই বলবে। তবে যাই হোক না কেন, তা যে বিরোধীদের কাছে সুখকর হবে না, তা নিশ্চিত হয়ে বলাই যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.