নন্দিতা রায় নয়াদিল্লি: ‘কংগ্রেস মুক্ত ভারত’। বিজেপির (BJP) দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন আপাতত পূরণ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং, উলটো দিকে গোটা দক্ষিণ ভারত ‘বিজেপি মুক্ত’ হয়ে গিয়েছে। অন্তত পরিসংখ্যান সেকথাই বলছে। আপাতত বিজেপি খুঁজছে এই হারের দায় কার উপর চাপানো হবে, সেই লোকটাকে।
বস্তুত, কর্ণাটকে এই বিপুল হারের ফলে বিন্ধ্য পর্বতের ওপারে আর সেভাবে প্রভাব রইল না গেরুয়া শিবিরের। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-কংগ্রেস (Congress), অন্ধ্রপ্রদেশে ওয়াইএস আর কংগ্রেস, তেলেঙ্গানায় টিআরএস (অধুনা বিআরএস), কেরলে বামেরা এবং কর্ণাটকে এই মুহূর্তে সরকারে চলে এল কংগ্রেস। বিজেপির সামান্য অস্তিত্ব রয়েছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরিতে। সেখানে বিজেপি সমর্থিত এনআর কংগ্রেস এখন ক্ষমতায়। সেটুকু বাদ দিলে গোটা দক্ষিণ এখন বিজেপি শূন্য।
অথচ, যে মোদি (Narendra Modi) হাওয়ায় ভর করে গোটা ভারতে এতদিন অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো ছুটছিল বিজেপি, কর্ণাটকেও ভরসা রাখা হয়েছিল সেই মোদি হাওয়াতেই। ভোটপ্রচারে বার বার কর্ণাটকে সভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। হিন্দুত্বের প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু অধ্যুষিত কর্ণাটকে মোদি-কণ্ঠে বার বার ধ্বনিত হয়েছে রাষ্ট্রপ্রেম এবং উন্নয়নের কথা। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বারবার উঠে এসেছে বজরংবলির নাম। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে কাজ করল না ‘মোদি-ম্যাজিক’। বস্তুত, দক্ষিণের রাজ্যটিতে পুরোই ফেল ‘ব্র্যান্ড মোদি’। প্রচারের শেষলগ্নে প্রধানমন্ত্রী দু’দিন টানা বেঙ্গালুরু এবং বৃহত্তর বেঙ্গালুরুতে রোড শো করেছিলেন। সেই এলাকাগুলিতেও বেশিরভাগ আসনে জিতেছে কংগ্রেস। মোদি যে ৪২ আসনে ভোটপ্রচার করেছিলেন, সেগুলিতে বিজেপির স্ট্রাইক রেট ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। অন্যদিকে, রাহুল গান্ধীর স্ট্রাইক রেট প্রায় ৭০ শতাংশ। তিনি অবশ্য মোটে ২২টি কেন্দ্রে প্রচার করেন।
বিজেপি এখন ভাবছে, এই হারের দায় চাপানো যায় কার উপর? প্রধানমন্ত্রী যে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটা মেনে নিতে নারাজ গেরুয়া শিবির। উলটে গেরুয়া শিবির এই দায় চাপানোর লোক খুঁজছে। প্রথমেই নিশানা করা হচ্ছে স্থানীয় নেতৃত্বকে। শোনা যাচ্ছে, এই হারের দায় চাপানো হতে পারে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার উপরও। বিজেপির অন্দর থেকে ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কর্ণাটকে এমনিতেই দলের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। ৪০ আসনে নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেষবেলায় গিয়ে হাল না ধরলে আরও বেহাল হতো পরিস্থিতি।
বস্তুত, কর্ণাটকের হার যে বিজেপিকে ভালমতোই ধাক্কা দিয়েছে, সেটা দলীয় দপ্তরের পরিস্থিতি দেখলেই বোঝা যাবে। এদিন সকালে ভালই ভিড় ছিল দিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গের বিজেপি অফিসে। সেলিব্রেশনের আয়োজনও হয়েছিল। বেলা বাড়তেই সেই পার্টি অফিস এক্কেবারে শুনশান, জনমনিষ্যি নেই। পার্টি অফিসের বাইরে দেখা গেল প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত একটি পোস্টার ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে। সেটি তুলে রাখারও কেউ নেই। এই ছবিই আগামী দিনের ভবিতব্য নয়তো, প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.