সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কোনটা দেশদ্রোহী কাজ সে বিচার কে করবে। প্রশাসনের সঙ্গে মতের অমিল হওয়া মানেই তা দেশদ্রোহিতার পর্যায়ভুক্ত হতে পারে না। নতুন করে এই মত আবার জাগিয়ে দিলেন নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন।
তাঁর বই ‘কালেকটিভ চয়েস অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার’-এর পরিবর্ধিত সংস্করণের প্রচারে দিল্লিতে এসেছিলেন অমর্ত্য সেন। সেই সময়ই এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। নতুন বইয়ের সূচনায় এনেছেন ‘প্লুরালিটি উইনারস’ শব্দবন্ধটি। ভারতের গত লোকসভা নির্বাচন ও সাম্প্রতিক মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল ব্যাখ্যা করতে গিয়েই এই ধারণার কথা উঠে এসেছে। যেখানে নির্বাচনী পদ্ধতিতে ‘মেজরিটি উইনারস’-এর চলতি ধারণাকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন ভিন্ন চিন্তার আলোয়। সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে জয়ী বলে যা ব্যাখ্যা করা হয়, আসলে তা নয় বলেই মত অর্থনীতিবিদের। কেননা, ‘মেজরিটি উইনারস’ হতে গেলে কোনও দল বা ব্যক্তিকে প্রতিটি বিরোধিতার মুখোমুখি হয়ে জয়ী হতে হয়। যা বর্তমান নির্বাচনী পদ্ধতিতে হয় না। এক্ষেত্রে একটি সামগ্রিকের মতকেই সংখ্যাগরিষ্ঠের মত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। নির্বাচনী জয় ও প্রশাসকের ব্যবহারের নানাদিক আলোচনা করতে করতেই উঠে আসে দেশদ্রোহিতার প্রসঙ্গ। কেননা তাঁর মতে, যদি সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনও প্রতিষ্ঠিত হয়, তাও কোনও বিরুদ্ধমতকে চাপা দেওয়া উচিত নয়। প্রশাসনের সঙ্গে মতানৈক্যকেই দেশদ্রোহিতা বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থনীতিবিদের প্রশ্ন, কোনটা দেশদ্রোহী কাজ সে বিচার কে করবে? তাঁর মতে মুক্ত আলোচনা, বিরুদ্ধ সমালোচনা ইত্যাদির পথ বন্ধ করলেই এই গণতান্ত্রিক পরিসরও রুদ্ধ হয়ে পড়ে। ঠিক এই কারণেই দেশে আলোচনার পরিবেশ নেই বলে মনে করেন তিনি। ‘গভর্নমেন্ট” বাই ডিসকাসনস’ বলে যে ধারণার কথা বলেছিলেন জন স্টুয়ার্ট মিল, অমর্ত্য সেনের মতে, তার পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বর্তমান সময়ে।
প্রসঙ্গত, দেশের নোটবাতিল নিয়েও প্রশাসনের বিরুদ্ধেই মত দিয়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তা নিয়ে নানা সময় আক্রমণের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। এমনকী নাম না হার্ভার্ডের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে করে এসেছিল প্রধানমন্ত্রীও খোঁচাও। কিন্তু বরাবরই বিরুদ্ধ সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ‘দ্য আরগুমেন্টেটেটিভ ইন্ডিয়ানস’-এর লেখক। এমনকী সে সমালোচনা তাঁর বিরুদ্ধে হলেও তিনি বিরুদ্ধ মতকে সম্মান জানাতে পিছপা হননি। এই সাক্ষাৎকারেও সেই দিকটিই আরও একবার তুলে ধরেছেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.