সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেউ বলেন ঐতিহাসিক ভুল। আবার কেউ বলেন, কাশ্মীরবাসীর জন্য প্রয়োজন ছিল এই ধারার। এর উপযোগিতা বা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে হাজারো তর্ক-বিতর্ক আছে। তবে, ধারাটির আর অস্তিত্ব নেই। সংসদে নিজেদের ক্ষমতাবলে এই ধারা বিলুপ্ত করে দিয়েছে মোদি সরকার। যার নেপথ্য কারিগর অমিত শাহ। স্বাধীন ভারতের অন্যতম বৃহত্তম সাংবিধানিক সংস্কার করে ফেলল মোদি সরকার। কিন্তু, প্রশ্ন হচ্ছে কী এই ৩৭০ ধারা। এর ফলে কী কী সুবিধা পেত কাশ্মীর?
৬৯ বছর আগে নেহরুর আমলে ১৯৫২ সালে সংবিধানে সংশোধন করে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়। এর ফলে একপ্রকার স্থায়ত্বশাসন পেয়ে যায় জম্মু ও কাশ্মীর। যদিও, এটা ছিল ভারতীয় সংবিধানের অস্থায়ী একটি ধারা। যা কাশ্মীরের বিধানসভা এবং রাষ্ট্রপতির সম্মতিতে সরিয়ে ফেলা যেতে পারে। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধান কার্যত অকেজো হয়ে যায়। কারণ, ভারতীয় সংবিধানের মাত্র দু’টি ধারা কাশ্মীরে কার্যকর হত। ১ নম্বর ধারা, যা ভারতের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়। দুই ৩৭০ নম্বর ধারা, যা কাশ্মীরকে বিশেষ অধিকার দেয় । কী সেই অধিকার?
১. ৩৭০ ধারা থাকার ফলে ভারতীয় সংসদে পাশ করানো বেশিরভাগ আইন সরাসরি কাশ্মীরে চালু করা যেত না। তাঁর জন্য অনুমতি লাগত কাশ্মীরের রাজ্য সরকারের। শুধুমাত্র বিদেশনীতি, নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং যোগাযোগ সংক্রান্ত আইন সরাসরি চালু করা যেত। নাগরিক অধিকার, বা জমি, সম্পত্তি, মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত আইন বা সংশোধনী সরাসরি চালু করা যেত না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, গোটা দেশে তিন তালাক আইন চালু হলেও রাজ্য সরকারের অনুমতি না মিললে তা কাশ্মীরে লাগু করা যেত না। এবার থেকে সংসদে পাশ হওয়া সব আইন কাশ্মীরে লাগু হবে।
২. কাশ্মীরের নাগরিক অধিকার আইন গোটা দেশের অন্য এলাকার থেকে আলাদা হওয়ায় সেখানে পৃথক দণ্ডবিধি ছিল। অর্থাৎ, একই অপরাধের জন্য গোটা দেশের মানুষ যা শাস্তি পেত, কাশ্মীরবাসী তা পেত না। অন্য রকম শাস্তির নিদান ছিল। অর্থাৎ, একপ্রকার একুশে আইন লাগু করা হয়েছিল। এখন আর সেসব চলবে না। গোটা দেশের আইন এখন কাশ্মীরেও লাগু হবে।
৩. কাশ্মীরের আলাদা পতাকা ছিল। ভারতের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ব্যবহার করা হত কাশ্মীরের পৃথক পতাকাও।
৪. ৩৭০ ধারা চালু থাকার ফলে কাশ্মীরের বিধানসভার মেয়াদ ছিল ৬ বছর। গোটা দেশের অন্য প্রান্তে তা ৫ বছর। এবার থেকে কাশ্মীরেও তা পাঁচ বছরই হবে।
৫. কাশ্মীরে ভারতের ১৯৭৬-এর ভূমি সংস্কার আইন লাগু ছিল না। ফলে, দেশের অন্য প্রান্তের মানুষ উপত্যকায় জমি কিনতে পারতেন না। সম্পত্তির মালিক ছিলেন স্থানীয়রাই। এবার থেকে গোটা দেশের মানুষ কাশ্মীরে সম্পত্তি কিনতে পারবেন ।
৬. ৩৭০ ধারার ফলে কাশ্মীরের সরকারি চাকরি সংরক্ষিত থাকত স্থানীয়দের জন্যই।
৭. ৩৭০ ধারা চালু থাকার ফলে কাশ্মীরবাসী দ্বৈত নাগরিকত্বের সুবিধা পেতেন। অথচ, ভারত দ্বৈত নাগরিকত্বকে স্বীকৃতি দেয় না। ধারা বাতিল হওয়ার ফলে কাশ্মীরিদের দ্বৈত নাগরিকত্বও বাতিল করা হল।
৮. ৩৫-এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কারা কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দার অধিকার পাবে, না নির্ধারণ করার বিশেষ অধিকার ছিল কাশ্মীর সরকারের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.