সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে কংগ্রেস। বিআরএসের তরফেও একটি অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে। সেই প্রস্তাব গৃহীতও হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে স্পিকারের অনুমতি ক্রমে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে এবং দরকারে ভোটাভুটি হবে। কিন্তু কী এই অনাস্থা প্রস্তাব? কীভাবে আনা যায়? চলুন জেনে নেওয়া যাক খুঁটিনাটি।
অনাস্থা প্রস্তাব কী?
সরকার চলাকালীন যদি কোনও সাংসদের মনে হয় এই সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে, তাহলে তিনি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন। ওই অনাস্থা প্রস্তাবে যদি ৫০ জনের বেশি সাংসদের সায় থাকে তাহলে স্পিকার সেটি গ্রহণ করেন এবং সেটা নিয়ে আলোচনা এবং ভোটাভুটি হয়। অনাস্থা প্রস্তাব শুধু সংসদের নিম্নকক্ষ অর্থাৎ লোকসভাতেই আনা যায়।
ভোটাভুটির পর কী হয়?
অনাস্থা প্রস্তাব স্পিকার গ্রহণ করলে সেই প্রস্তাব নিয়ে লোকসভায় ভোটাভুটি হয়। সরকার পক্ষ যদি সেই ভোটাভুটিতে হেরে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী-সহ গোটা সরকারকে ইস্তফা দিতে হয়। সরকার পক্ষ যদি ভোটাভুটিতে জিতে যায় অর্থাৎ অনাস্থা প্রস্তাব যদি পাশ না হয়, তাহলে আগের মতোই সরকার চালাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
এই মুহূর্তের সংখ্যার হিসাব:
সংখ্যার বিচারে এই মুহূর্তে অনাস্থা প্রস্তাব এলেও চিন্তার কোনও কারণে নেই মোদি সরকারের। এই মুহূর্তে মোদির নেতৃত্বাধীন NDA জোটের আসনসংখ্যা ৩৩১। বিজেপি-র একার আসনসংখ্যাই ৩০৩। বিজেপি বিরোধী INDIA জোটের দখলে রয়েছে মাত্র ১৪৪টি আসন। কোনও জোটে নেই এমন সাংসদের সংখ্যা সত্তরের আশেপাশে। সুতরাং কোনওভাবেই সরকার পড়ার সম্ভাবনা নেই।
আগে কী হয়েছে?
এর আগে মোট ২৭ বার অনাস্থা প্রস্তাব (No Confidence Motion) আনা হয়েছে। নেহেরু থেকে মোদি, সবার বিরুদ্ধেই এসেছে এই প্রস্তাব। সবচেয়ে বেশি ১৫ বার অনাস্থা প্রস্তাব এসেছে ইন্দিরা গান্ধীর (Indira Gandhi) বিরুদ্ধে। প্রতিবারই তিনি জয়ী হয়েছেন। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, নরসিমা রাও-এর সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এসেছে ৩ বার করে। তারাও জয়ী হয়েছেন। নেহেরু, মনমোহন সিং এবং মোদির বিরুদ্ধে একবার করে এসেছে অনাস্থা প্রস্তাব। ২০১৮ সালে মোদির বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে ১৯৯ ভোটে জয়ী হয় তাঁরা। তবে, অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে সরকার খোয়ানোর ইতিহাসও আছে। মোরাজি দেশাই, চরণ সিং, ভিপি সিংদের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয় আস্থাভোটে হেরেই। ১৯৯৯ সালে মাত্র এক ভোটে অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে পদত্যাগ করতে হয় অটল বিহারী বাজপেয়ীকে।
হার নিশ্চিত জেনেও কেন অনাস্থা আনছে বিরোধীরা?
বিরোধীরা বলছে, মণিপুর নিয়ে কেন্দ্রের নীরবতা ভঙ্গ করাই লক্ষ্য। আর সেই কারণেই এই প্রস্তাব। তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন,”বিজেপি (BJP) কী বলছে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল, আমাদের কথাগুলো ওখানে (সংসদে) বলা যাবে। সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে আজকের দিনটা খুবই উজ্জ্বল।’ বিরোধীরা মনে করছে, অনাস্থা প্রস্তাব এলে, প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হবেন সংসদে মণিপুর ইসুতে বলতে। আর সংসদে কোন কোন দল সত্যি সত্যি বিরোধীদের সঙ্গে আছে, সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ২০০৩ সালে তৎকালীন বাজপেয়ী সরকারের বিরুদ্ধে একইভাবে অনাস্থা এনেছিল কংগ্রেস। সেবারে বাজপেয়ীর সরকার পড়েনি, কিন্তু সেই অনাস্থা প্রস্তাবকে সামনে রেখে দেশজুড়ে একটি বৃহত্তর জোট গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী। এবারেও পরিস্থিতি খানিকটা একইরকম।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.