সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: বাংলার ভোটের আট দফার মধ্যে চার দফা শেষ। বাকি চার দফার জন্য প্রচারের রণকৌশলে পরিবর্তন আনল বিজেপি (BJP)। জনসভার সংখ্যা কমিয়ে এবার আরও বেশি করে রোড শো’র দিকে নজর দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডারা (JP Nadda)।
বিজেপির দাবি, জনসভার তুলনায় রোড শো’তে অনেক বেশি এলাকায় বেশি সংখ্যক জনতার কাছাকাছি যাওয়া যায়। বিজেপি থিঙ্কট্যাঙ্ক তাই বাকি চার দফার নির্বাচনের আগে আরও বেশি সংখ্যক রোড শো করার দিকে জোর দিচ্ছেন। নিরাপত্তার প্রোটোকল মেনে রোড শো করবেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। তাই জনসভা যা হবে, তার বেশিরভাগের মধ্যমণি থাকবেন তিনিই। শাহ, নাড্ডার সঙ্গে বিজেপির অন্য তারকা প্রচারকরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রোড শো’তে হাজির থাকবেন। কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও সুসজ্জিত ট্যাবলোতে হবে শেষ চার দফায় রোড শো।
১৭ এপ্রিল রাজ্যে পঞ্চম দফার ভোট। তার আগে বিজেপির (BJP) শীর্ষনেতারা মনে করছেন, জনসভায় সাধারণত জনসমাগম যা হয়, তার থেকে রোড শো’তো রাস্তার দু’ধারে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায়। তাছাড়া রোড শো করার আরও একটি সুবিধা হল, মানুষের অনেক সামনে চলে আসা যায়। বড় নেতাদের নাগালের মধ্যে পেলে অনেকের মনেই তার প্রভাব পড়ে। তাছাড়া সম্প্রতি নির্বাচনী প্রচারে কোভিড বিধি মেনে চলার কড়া নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট। এই সব মিলিয়েই এবার জনসভার বদলে বেশি সংখ্যায় রোড শো করতে চাইছে বিজেপি। ইতিমধ্যেই ভবানীপুরে প্রার্থী রুদ্রনীল ঘোষের সমর্থনে গলি গলি গিয়ে প্রচার করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। বৈশালী ডালমিয়া থেকে শুরু করে বঙ্কিম ঘোষ, বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রার্থীর হয়ে রোড শো করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। সোমবার রাজ্যে মোদির ৩টি জনসভা থাকলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোটের উপর রোড শো’র মাধ্যমেই প্রচার সারবেন। চলতি সপ্তাহে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকটি রোড শো করবেন বিজেপির প্রাক্তন ও বর্তমান সভাপতি।
দলের নতুন এই কৌশলের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডাও। তিনি বলেন, “জনসভা করার পিছনে প্রধান উদ্দেশ্য হল, নিজেদের বক্তব্য জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা। ইতিমধ্যেই আমাদের নেতারা প্রচুর জনসভা করে বঙ্গবাসীর কাছে বিজেপির বক্তব্য তুলে ধরেছেন। বাংলার নাগরিকরা তা বুঝেও গিয়েছেন। সময়ের প্রয়োজনে এবার তাই আমরা রোড শো’র দিকে ঝুঁকছি। এর ফলে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায়। খুব কম করে হলেও জনসভায় অন্ততপক্ষে ৫০-৬০ হাজার মানুষের কাছে তো আমরা যাচ্ছিই।” সেক্ষেত্রে কি প্রধানমন্ত্রীকেও রোড শো করতে দেখা যেতে পারে? সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে নাড্ডা বললেন, “না না, উনি জনসভাই করবেন। রোড শো করব আমরা বাকিরা।” অবশ্য অমিত শাহ বা তিনি যে জনসভা আর করবেনই না, তেমন নয়। তবে তার সংখ্যা কমিয়ে বাড়ানো হবে রোড শোর সংখ্যা। কিন্তু এই পরিকল্পনাতেও পরিবর্তন হতে পারে, যদি এর মাঝে নতুন করে কোনও বড় ইস্যু তৈরি হয় রাজ্যে। সেক্ষেত্রে যে আবার জনসভার মাধ্যমে বঙ্গের ভোটারদের কাছে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবে বিজেপি, সেই ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন নাড্ডা।
বঙ্গে পদ্মবন হবে, নাকি ফের নবান্নে ফুটবে জোড়াফুল। অথবা রাইটার্সের পর এবার নবান্নের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারও পাবে বাম বা কংগ্রেসের কোনও নেতার স্পর্শ, সে উত্তর মিলবে ২ মে। তবে ততদিন পর্যন্ত যেন অপেক্ষা করার প্রয়োজনীয়তাই দেখছেন না বিজেপির হাইকমান্ডের কেউ। শুধু জনসভায় কর্মী-সমর্থকদের উৎসাহিত করতেই নয়, অন্দরমহলে কান পেতেও শোনা যাচ্ছে রাজ্য থেকে আসা খবরে, তাঁরা নিশ্চিত যে গেরুয়া রঙের প্রলেপ পড়ছেই বাংলায়। ডবল ইঞ্জিন সরকার তৈরি করে বঙ্গবাসীর উন্নতি করাই লক্ষ্য বিজেপি হাইকমান্ডের। তাতে বিরোধী আসনে কে থাকল, তাতেও কিছু যায়-আসে না। তাই তো নাড্ডাকে বলতে শোনা গেল, “বিরোধী দল যেই হোক, আমাদের কী? আমরা মানুষের জন্য কাজ করব। বাংলাকে দেখাব কীভাবে এতদিন ধরে তাঁদের বঞ্চিত করে রাখা ছিল। সে সব দেখতে পেয়ে মানসিকভাবে বাংলার মানুষ আরও বেশি করে আমাদের সঙ্গে আসবেন। তাঁরাই বিরোধীদের বুঝে নেবেন। আমরা শুধু সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে নিজেদের কাজ করে যাব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.