Advertisement
Advertisement

Breaking News

চা-শ্রমিক

‘দিল্লির চাওয়ালা’র পাশে আছে অসমের চাওয়ালারা? কোন পথে বইছে হাওয়া?

আপার অসমের ৭টি জেলায় চা-শ্রমিকরাই নির্ণায়ক ফ্যাক্টর, কোন দিকে ঝুঁকে তাঁরা?

Warning sign for modi, Assam Tea tribes are not happy with BJP
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:April 5, 2019 8:33 pm
  • Updated:April 17, 2019 1:24 pm  

মণিশংকর চৌধুরি, ডিব্রুগড়: উপজাতি অধ্যুষিত অসমের মোট জনসংখ্যা মোটামোটি ৩ কোটি ৫০ লক্ষের মতো। এর মধ্যে ৭০ লক্ষই চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠী (Tea tribe)। ২০১৪ লোকসভা ভোটের আগে এদের সবাইকে তফসিলি উপজাতিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘দিল্লির চায়েওয়ালা’র সেই প্রতিশ্রুতি এখনও পূরণ হয়নি। আবার তফসিলি উপজাতিদের মধ্যে চা বাগান নির্ভর জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তাও পুরোপুরি পূরণ করতে পারেনি মোদি সরকার।

[আরও পড়ুন: বিজেপিকে রুখতে একতাই ভরসা, দিল্লিতে জোটের পথে আপ-কংগ্রেস]

প্রতিশ্রুতি আর প্রতিশ্রুতি পূরণের হিসেবের ফারাকটা একবার দেখে নেওয়া যাক৷ চা বাগান নির্ভর জনগোষ্ঠীর মোট ৭০ লক্ষ মানুষের মধ্যে মোটে ২৫ লক্ষ তফসিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। চা বাগান নির্ভর জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোট ১১২টি উপজাতি রয়েছে, এদের মধ্যে মোট ৩৬টি উপজাতি তফসিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাকি ৭৬টি জনগোষ্ঠীর ঠাঁই হয়নি তফসিলি উপজাতিদের তালিকায়। সরকারের এই সিদ্ধান্তে বেজায় চটেছে অসমের চা শ্রমিকদের ছাত্র সংগঠন ATTSA (Assam tea tribe student association)। সংগঠনের দাবি ছিল, ১১২টি চা বাগান নির্ভর জনগোষ্ঠীকেই উপজাতিদের তালিকাভুক্ত করতে হবে। বিজেপির উপর চরম অসন্তুষ্ট অসমের সবচেয়ে প্রভাবশালী চা শ্রমিক সংগঠন, অসম চা মজদুর সংঘ।

Advertisement

এই সংগঠনের সচিব রূপেশ গোয়ালা বলেন, “দিল্লির চায়েওয়ালা হয়েও চায়েওয়ালাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কেরলে ন্যূনতম মজুরি ৩১০, কর্ণাটকে ২৬৩ টাকা। অসমে ১৬০টাকা। উনি চা শ্রমিকদের খয়রাতি দিয়ে আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছেন।” ফলে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, চা শ্রমিক সংগঠনগুলি গেরুয়া শিবিরের প্রতি বেশ ক্ষুব্ধ। তবে, সব সংগঠন নয়। চা শ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠনও বিজেপির পাশে এখনও রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে AASA (All Adivasi Student Association of Assam)। এই সংগঠনটির দাবি, “যেভাবে জনজাতিকরণ করা হয়েছে, সেটা সমর্থনযোগ্য। কারণ, টি ট্রাইবের মধ্যে অনেকেই তফসিলি জাতিভুক্ত। এদের উপজাতির মধ্যে আনা যাবে না।”

[আরও পড়ুন: অসুস্থ সাংবাদিকের পরিচর্যায় রাহুল, জুতো হাতে প্রিয়াঙ্কা! ভাইরাল ভিডিও]

চা শ্রমিক সংগঠনগুলির এই ক্ষোভ আবার সবক্ষেত্রে নিচুস্তরের শ্রমিকদের মধ্যে নেই। তাঁর কারণ, নিচুতলার চা শ্রমিকদের দেদার খয়রাত বিলিয়েছে বিজেপি সরকার। চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে চাল দেওয়া হচ্ছে। লেবার সর্দারদের মোবাইল ফোন দেওয়া হচ্ছে। দশম শ্রেণি পাশ করার পর আদিবাসী ছেলেমেয়েদের এককালীন ৯ হাজার টাকা করে অনুদান দিচ্ছে অসম সরকার। যার ফলে তৃণমূলস্তরে গেরুয়া শিবিরের জনপ্রিয়তায় ততটা খামতি পড়েনি।

আপার অসমের ৭টি জেলাই মোট সাড়ে ৮০০ চা বাগান আছে। এই সাতটি জেলাতেই নির্ণায়ক ফ্যাক্টর চা-শ্রমিকরা। ডিব্রুগড়, জোড়হাট, তিনসুকিয়া, শিবসাগর, গোলাঘাট জেলাগুলিতে এদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। ২০১৪ লোকসভায় সবচেয়ে চা-শ্রমিকরা একচেটিয়া সমর্থন করেছিল বিজেপিকে। যার ফলে ডিব্রুগড়ের মতো লোকসভা কেন্দ্রে পাঁচবারের সাংসদ তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কংগ্রেসের পবন সিং ঘাটোয়ারকেও হারতে হয়েছিল।

এবারেও পবন সিং ঘাটোয়ার ফের হাত শিবিরের প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ রামেশ্বর তেলি। এক চা বাগানে লেবার সর্দার ঝণ্ডু ওরাংয়ের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, তিনি অন্তত বিজেপির কাজে খুশি । তিনি বললেন,” আমি একটি মোবাইল পেয়েছি। সরকার চাল দিচ্ছে, মোবাইল দিচ্ছে, টাকা দিচ্ছে, আমি তো বেশ ভালই আছি।” বিরোধের সুরও কিন্তু প্রবল। ২০০৭ সালে রাজধানী গুয়াহাটির রাস্তায় তফসিলি উপজাতিভুক্ত হওয়ার দাবিতে আদিবাসীরা প্রবল বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালায় পুলিশ।

[আরও পড়ুন: চপার কেলেঙ্কারির মিডলম্যানের মুখে শীর্ষ কংগ্রেস নেতার নাম! চাপে রাহুল ব্রিগেড]

সেসময় গুয়াহাটির রাস্তায় বিবস্ত্র করে ঘোরানো হয়েছিল ডিব্রুগড়ের লক্ষ্মী ওরাংকে। তাঁর পর থেকে এখনও পর্যন্ত চা-শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন লক্ষ্মী। চা-শ্রমিকদের মধ্যে তাঁর বেশ প্রভাব রয়েছে। তিনি বলছেন, “২০১৪ সালে মোদি এসে বলেছিল বিজেপি ক্ষমতায় এলে টি-ট্রাইবকে এসটি স্টেটাস দেওয়া হবে। আজও সেটা হয়ে ওঠেনি। ওটা শুধুমাত্র ভোটব্যাংকের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে আমাদের।” এর মধ্যে আবার চা শ্রমিকদের মধ্যে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গজিয়েছে। ‘আদিবাসী ন্যাশনাল পার্টি অফ অসম’ নামের এই রাজনৈতিক দলটিও এবারের ভোটে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

মোট কথা, ২০১৪ সালে চা-শ্রমিকদের যে একচেটিয়া সমর্থন দিল্লির চাওয়ালা পেয়েছিলেন, এবারে সেটি হচ্ছে না। অনেকাংশেই শোনা যাচ্ছে বিরোধের সুর। তাই, কিছুটা হলেও ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে বিজেপিকে। আবার সেই ক্ষতি কিছুটা সামাল দিতে পারেন বাঙালি ভোটাররা। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের ইস্যুতে বিজেপির পাশেই আছে তাঁরা। তাছাড়া, চা বাগান নির্ভর জনগোষ্ঠীগুলিও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদ করেনি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement