সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বপ্ন দেখতে চোখের দৃষ্টি লাগে না৷ লাগে অদম্য ইচ্ছেশক্তি৷ আর স্বপ্নপূরণে সহায় হয়ে ওঠে নিরন্তর অধ্যবসায়৷ এ কথাই যেন আবার প্রমাণ করে দিলেন প্রাঞ্জল পাতিল৷ চোখের দৃষ্টি হারিয়েও প্রথমবাররে চেষ্টাতেই ইউপিএসসি পরীক্ষায় সফল হয়ে আএএস অফিসার হওয়ার পথে তিনি৷
ছোট্টবেলায় এক সহপাঠীর পেন্সিলের খোঁচা লাগে চোখে৷ মাত্র ৬ বছর বয়স তখন প্রাঞ্জলের৷ সে চোখের দৃষ্টি নষ্ট হয় তখনই৷ ডাক্তাররা ভয় পেয়েছিলেন, সতর্ক করেছিলেন যে অন্য চোখটিরও দৃষ্টি চলে যেতে পারে৷ দুঃস্বপ্নের মতোই সত্যি হয়েছিল আশঙ্কা৷ দুই চোখেই আলো নিভেছিল প্রাঞ্জলের৷
কিন্তু দৃষ্টি হারিয়েও জীবনযুদ্ধে হেরে যাননি প্রাঞ্জল৷ তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল মুম্বইয়ের এক ব্লাইন্ড স্কুলে৷ সাফল্যের সঙ্গে স্কুলের পাট চুকিয়ে মুম্বইয়েরই সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক হন প্রাঞ্জল৷ এখানেও থেমে যাননি৷ দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে করেন স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা৷ ইতিমধ্যে তাঁর বিয়েও হয়৷ কিন্তু প্রাঞ্জলের লক্ষ্য যে ছিল অন্য কোথাও৷ আর তাই সংসারকেই জীবনের সার করে তোলেননি৷ আরও পড়াশোনা করে বসেন ইউপিএসসি পরীক্ষায়৷ আর সেখানেই মিলল অভাবনীয় সাফল্য৷ প্রথমবার চেষ্টাতেই তিনি পেরিয়ে গেলেন এ পরীক্ষার কঠিন চৌকাঠ৷ সারা ভারতে তাঁর ব়্যাঙ্ক ৭৭৩৷
প্রাঞ্জলের সাফল্য নিঃসন্দেহে সমস্ত দৃষ্টিহীনদের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল৷ কোন মন্ত্রে এই সাফল্য এল তাঁর কাছে৷ প্রাঞ্জল জানান, দৃষ্টিশক্তি না থাকাকে কখনওই জীবনের উপর চেপে বসতে দেননি তিনি৷ পাল্টা পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছিলেন৷ নতুন নতুন জিনিস শিখতে তাঁর সবসময় ভাল লাগে৷ সেই আগ্রহই তাঁকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলতে আলো দেখিয়েছে৷
তবে সাফল্যকে অনুপ্রেরণা হিসেবে ভাবতে নারাজ প্রাঞ্জল৷ বরং তিনি বলেন, সাফল্য নয়, আমার সংগ্রাম বরং অনেককে উৎসাহ দিতে পারে৷ কিন্তু সাফল্য জরুরি, কেননা তবেই সাধারণ মানুষ সংগ্রামের দিকে চোখ ফেরান৷ আর তাহলেই তাঁদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়৷ সে কথাই নিজের সাফল্যের মুহূর্তে আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন প্রাঞ্জল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.