সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পাঞ্জাবের সাংগ্রুর জেলার ছোট্ট শহর ভবানীগড়। আর সেখানেই ব্যস্ত সড়কে ট্রাফিক সামলান হেড কনস্টেবল সতপাল সিং। কিন্তু আর পাঁচজন পুলিশকর্মীর জীবন থেকে সতপালের কাহিনি আলাদা। উর্দির বাঁ-দিকে বুকের কাছে তাঁর মেডেল রিব্যান্ড। আর সেখানেই জ্বলজ্বল করছে বীর চক্র। অবাক হতে পারেন ভেবে যে, পুলিশকর্মীর বুকে বীর চক্র! সে তো বীর সেনানীরা পেয়ে থাকেন। সেরকমই কাহিনি রয়েছে সতপালেরও। কারণ তিনিও বছর কুড়ি আগে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের পুরস্কার স্বরূপ এই বীর চক্র পেয়েছিলেন।
কিছুটা আক্ষেপের সুরেই বলেছেন, ‘আমি হয়তো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু বীর চক্রের জন্য কোনও যোগ্য সম্মান পাইনি আমি। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী কোটায় পুলিশের চাকরি পাই। এখন আমি হেড কনস্টেবল। ক্রীড়াক্ষেত্রে যাঁরা মেডেল পান তাঁরাও উঁচু ব়্যাঙ্ক পান সেনায়। আমি এমন একজন মেরেছি যে কিনা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সেনা সম্মান পেয়েছে। যাই হোক, ভগবান দয়াবান। আমি বেঁচে আছি এই অনেক। শুধু খারাপ লাগে আমার বেকার শিক্ষিত ছেলের জন্য। স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেও চাকরি জোটেনি তাঁর।’
খোলসা করে বলা যাক, ২০ বছর আগে এমন পুলিশকর্মীর জীবন ছিল না সতপালের। তখন তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনার সদস্য। কারগিল যুদ্ধে উপত্যকার টাইগার হিলে তখন পাক সেনার প্রতি-আক্রমণ প্রতিহত করেছিলেন সেপাই সতপাল সিং। আর সেই সময় তাঁর বীরত্বের জেরেই খতম হয় পাক সেনার ক্যাপ্টেন কারনাল শের খান-সহ নর্দার্ন লাইট ইনফ্যানট্রি বাহিনীর চারজন। যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর জন্য শের খানকে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বীরত্ব সম্মান নিশান-এ-হায়দার পদকে ভূষিত করা হয়। সেই সতপাল সিং বীরত্বের জন্য পান বীর চক্র। তিনি শিখ রেজিমেন্টের সেপাই ছিলেন। সেদিনের যুবক সেনানী আজ ৪৬ বছরের পুলিশ কনস্টেবল। যুদ্ধের স্মৃতি হাতড়াতে গিয়ে আবেগমথিত হয়ে পড়েন সতপাল। বলেন, ‘আমাদের ট্রুপ তখন পাক সেনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ছিল। আমাদের ধ্বনি ‘জো বোলে সো নিহাল, সত শ্রী অকাল’ তুলে আমরা আক্রমণ প্রতিহত করি। প্রথম আমি আমার মেশিন গান থেকে চারটে বুলেট ছুঁড়ি। কিন্তু ওরা কাছে এসে গিয়েছিল। তখন হাতাহাতি হচ্ছিল। মেশিন গানের বাট দিয়ে এরপর আমি একজন লম্বা, ট্র্যাকস্যুট পরা সেনার মাথায় আঘাত করি। মূহূর্তের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। তখনও জানতাম না নিহত ব্যক্তি ক্যাপ্টেন কারনাল শের খান। পরে রেডিও অপারেটরের মাধ্যমে তার পরিচয় জানলাম।’
তবে শত্রুকে মারলেও তার পরাক্রম দেখে গর্বিত সতপাল। বলেন, শের খান ভালই লড়াই করে। ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া সতপালের বীরত্বের জন্য তাঁর নাম পরমবীর চক্রের জন্য সুপারিশ করে। তবে সতপালকে বীর চক্র সম্মান দেয় ভারত সরকার। ২০০৯ সালে অবসর নেন সতপাল। সেই বছরই পাঞ্জাব পুলিশে যোগ দেন তিনি। কিছুটা আক্ষেপের সুরেই বলেছেন, ‘আমি হয়তো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিন্তু বীর চক্রের জন্য কোনও যোগ্য সম্মান পাইনি আমি। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী কোটায় পুলিশের চাকরি পাই। এখন আমি হেড কনস্টেবল। ক্রীড়াক্ষেত্রে যাঁরা মেডেল পান তাঁরাও উঁচু ব়্যাঙ্ক পান সেনায়। আমি এমন একজন মেরেছি যে কিনা পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সেনা সম্মান পেয়েছে। যাই হোক, ভগবান দয়াবান। আমি বেঁচে আছি এই অনেক। শুধু খারাপ লাগে আমার বেকার শিক্ষিত ছেলের জন্য। স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেও চাকরি জোটেনি তাঁর।’ বীরত্বের জন্য পুরস্কার পেলেও যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি না হওয়ার খেদ চোখে পড়ে তাঁর কথায়। কারগিল বিজয় দিবসে এমন বীরদের ‘সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন’-এর স্যালুট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.