সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিম দোষী সাব্যস্ত। এই খবর ছড়িয়ে পড়তে অশান্তির আগুনে জ্বলছে পাঁচকুলা। হরিয়ানার এই শহরে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩২ জনের। জখম তিনশোরও বেশি। দারার অনুগামীদের তাণ্ডবে হরিয়ানা, পাঞ্জাব এমনকী দিল্লিতেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুড়েছে দু’শোর বেশি গাড়ি। জ্বলেছে একাধিক সরকারি অফিস। অশান্তির শাসন উত্তর ভারতের তিন রাজ্য জুড়ে। ঘটনায় বিজেপি শাসিত হরিয়ানা প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা।
[ধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত স্বঘোষিত ধর্মগুরু রাম রহিম]
যুদ্ধক্ষেত্র রাম রহিমের খাসতালুক পাঁচকুলা। যত্রতত্র পড়ে মৃতদেহ। সরকারি অফিস থেকে যানবাহন। উন্মত্তদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কিছুই। লাঠি, তরোয়াল, অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়েছে রাম রহিমের অনুগামীরা। তাদের রোষে পাঁচকুলার পাঁচতারা হোটেল, ইনকাম ট্যাক্স অফিস, পেট্রল পাম্প ভস্মীভূত। অনুগামীদের নিশানায় ছিল সংবাদমাধ্যমও। একাধিক টিভি চ্যানেলের ওবি ভ্যান ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এক চিত্র সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। পাঁচকুলার সেক্টর ৩ প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে যায়। পাঁচকুলার সরকারি হাসপাতালে ১৫ জনের দেহ মিলেছে। পাঁচকুলার প্রতিটি হাসপাতাল আহতদের ভিড়ে উপচে পড়েছে। শুরু হয়েছে রক্ত সংকট। সিরসার অবস্থাও অগ্নিগর্ভও। সেখানে একাধিক গাড়ি এবং অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পাঁচকুলার উত্তেজনায় পুড়েছে প্রতিবেশী পাঞ্জাব এবং দিল্লি। পাঞ্জাবের মানসায় ইনকাম ট্যাক্স দপ্তরের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। দিল্লির আনন্দবিহার স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ফাঁকা ট্রেনের দুটি কামরায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার চেষ্টা হয়। ৬ কলম সেনা এবং ১০ কোম্পানি সিআরপিএফ পাঠানো হয় হরিয়ানায়। অশান্তি ঠেকাতে সেনা ফ্ল্যাগমার্চ করে। তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শান্তির আবেদন জানিয়েছেন। হরিয়ানা ও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। তড়িঘড়ি কিরঘিজস্তান সফর সেরে ভারতে ফিরছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। হরিয়ানা সরকারের থেকে রিপোর্ট তলব করেছে পিএমও।
[জানেন, কীভাবে ফাঁস হয়েছিল গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের কুর্কীতি?]
#WATCH: Two empty rakes of Rewa Express at Anand Vihar Terminal railway station set on fire in Delhi #RamRahimVerdict pic.twitter.com/bd5KzfSdYX
— ANI (@ANI) August 25, 2017
হরিয়ানা জুড়ে নৈরাজ্য চলতে থাকায় তোপের মুখে পড়েছে মনোহরলাল খাট্টার প্রশাসন। আদালতের নির্দেশের পরও কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেওয়া হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি ১৪৪ ধারা ভেঙে কীভাবে জমায়েত হল তার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি প্রশাসন। বছর দেড়েক আগে জাঠ আন্দোলন থেকে কেন শিক্ষা নিল না প্রশাসন, সেই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। মনোহরলাল খাট্টারের ইস্তফার দাবি জোরাল হচ্ছে। তবে এই ঘটনায় খাট্টারের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাজনাথ সিং। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যকে দোষ দেওয়া ঠিক নয়। হরিয়ানা সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছিল। তবে গুরমিত রাম রহিমকে কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। রোহতকে তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানকার জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এমন তথ্য তাদের কাছে নেই। তবে হরিয়ানা ও পাঞ্জাব হাইকোর্টের নির্দেশে নতুন করে বিপাকে পড়েছে ওই স্বঘোষিত ধর্মগুরু। তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে বলেছে আদালত। ডেরার সম্পত্তি নিলাম করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.