সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একেই হয়তো বলে প্রকৃত সহধর্মিনী কিংবা অর্ধাঙ্গিনী! স্বামীর প্রতিটি পদক্ষেপে পা মিলিয়ে অপরাধে দুনিয়ায় সম্রাজ্ঞী হয়ে ওঠা। এনকাউন্টারে খতম হয়েছে উত্তরপ্রদেশে ডন বিকাশ দুবে। জেলবন্দী তাঁর স্ত্রী রিচা। প্রেম করে বিয়ে। দীর্ষ ২৪ বছরের দাম্পত্য। কেমন ছিল তাঁদের সেই দাম্পত্য জীবন?
শাস্ত্রীনগরে পিসির বাড়িতে পড়তে আসত ছিপছিপে চেহারার ছেলেটা। সেখানেই প্রথম দেখা। আর মন দিয়ে ফেলা মেয়েটিকে। সেই মেয়ে আবার বায়ুসেনার এক কর্মীর সন্তান। পাশেই এইচপি কর্পারেশনের আবাসনে থাকত। রিচা নামের মেয়েটিকে বাড়ির লোক আদর করে ডাকত সোনু নামে। ততদিনে একটু একটু করে অপরাধ জগতে পা রাখতে শুরু করেছে সেই যুবক। আর তার সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে রিচার দাদা রাজু নিগমের। যে কোনও কাজেই সে এই যুবকের সঙ্গী। তাই তার বাড়িতে ছিল যুবকটির অবাধ যাতায়াত। সেই সূত্রেই প্রেম। কিন্তু রাজুর বাড়িতে তীব্র আপত্তি। বাধা ছিল যুবকটির বাড়িতেও। তাই বাড়ি থেকে পালাল দু’জনেই। বিয়েও হয়ে গেল। সেটা ১৯৯৭। কয়েক দিন পর রিচা যুবকটিকে ছেড়ে ফিরে গেল বাড়ি। কিন্তু যুবকের দাপট, চমকানিতে বেশি দিন থাকা গেল না। তার সঙ্গেই ফিরতে হল। তারপর থেকে শুরু হল দীর্ঘ প্রায় ২৪ বছরের পথচলা। বদলে যাওয়া পথে যুবকের অপরাধেরও সঙ্গী হয়ে উঠল রিচা। আর সেই যুবক? ৬০টি অভিযোগ মাথায় নিয়ে শুক্রবার সে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে শেষ হয়ে গিয়েছে। রিচার স্বামী বিকাশ দুবে।
স্বামীকে শুধু ভালবাসেনি রিচা। তার কাজে-অকাজেও সঙ্গী ছিল নিরন্তর। সমস্ত কাজে সমর্থন জুগিয়ে গিয়েছে। তা সে অপরাধমূলক কাজই হোক বা রাজনীতির জগৎ। সে সময় বিকাশের বিভিন্ন কাজে সঙ্গী ছিল রিচার দাদা রাজুও। কিন্তু পরে সে বোন-ভগ্নিপতির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে।
কীভাবে বিকাশের অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিল রিচা? সূত্রের খবর, বিকরু গ্রামের বাড়িতে না থাকলেও সিসিটিভি ক্যামেরায় কাজকর্মে নজর রাখত সে। তার মোবাইলে লিংক জোড়া ছিল। বিকরু গ্রামের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ। হয়তো মোবাইল থেকেই সে সিসিটিভি-র ফুটেজ মুছেও ফেলেছে। ২০১৭-য় এসটিএফ বিকাশকে গ্রে্প্তার করেছিল। তখন সিসিটিভি ফুটেজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল রিচা। যাতে পুলিশ এনকাউন্টারে বিকাশকে মারতে না পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী জানান, রিচা বেশির ভাগ সময় কানপুরেই থাকত। কিন্তু তার কড়া নজর থাকত বাড়িতে। বাড়ির কর্মী ও পরিচারকরা ‘ভাবিজি’র ভয়ে সর্বদা তটস্থ থাকত। কোনও মিথ্যা বললেই একেবারে চেপে ধরতেন রিচা। তবে কোনও কালেই গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে রিচার তেমন যোগাযোগ ছিল না।
বৃহস্পতিবারই লখনউয়ে রবীন্দ্রনগরের বাড়ি থেকে পুলিশ রিচাকে সন্তান-সহ গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে বিকাশকে মদত ও পালাতে সাহায্য করার অভিযোগও আনা হয়েছে। সূত্রের খবর, চৌবেপুর গ্রামে পুলিশের উপর হামলার ষড়যন্ত্রেও যুক্ত ছিল রিচা। স্বামীর হাত ধরে পা রেখেছিল রাজনীতিতে। বিকাশ—রিচার দুই সন্তান। বড় আকাশ বিদেশে ডাক্তারি পড়ছে। ছোট শানু কলেজছাত্র। মায়ের সঙ্গে লখনউয়ে থেকে পড়াশোনা করত সে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.