সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: যুদ্ধের আগুনপাখির চিতাভস্ম থেকে জন্ম বাংলাদেশের (Bangladesh)। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের মেরুদণ্ড ভেঙে বাঙালিদের জন্য স্বাধীন দেশ গড়তে রক্তগঙ্গায় স্নান করেছিল ভারত (India)। ১৬ ডিসেম্বর পাক সেনার আত্মসমর্পণের পর থেকে দিনটি ভারত ও বাংলাদেশের কাছে হয়ে ওঠে ‘বিজয় দিবস’। ওই যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’। ওই অভিযানের অন্তর্গত ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধে করাচি বন্দরে অত্যন্ত সফল এবং ভয়াবহ হামলা চালিয়েছিল ভারতীয় নৌবহর। একের পর এক মিসাইলের আঘাতে দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছিল পাক বন্দর এবং পড়শি দেশের যুদ্ধজয়ের স্বপ্ন।
১৯৭১ সালে ভারত-পাক যুদ্ধ বা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের উপকূলে প্রবেশ করে ভারতীয় নৌবহর। করাচি বন্দরে পাক রণতরী ও জ্বালানির গোদাম অ্যান্টিশিপ মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করে ভারতের রণতরীগুলি। ওই অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’। এই অত্যন্ত গোপন অভিযানে অংশ নিয়েছিল ভারতীয় নৌসেনার তিনটি যুদ্ধ জাহাজ– আইএনএস নিপাত, আইএনএস নির্ঘাত এবং আইএনএস বীর। সঙ্গে ছিল আর্নলা শ্রেণির করভেট – আইএনএস কিলতান এবং আইএনএস কাটচল। ছিল ট্যাঙ্কার জাহাজ আইএনএস পোষক। এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন কমান্ডিং অফিসার ববরু ভান যাদব। চূড়ান্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করে গুজরাটের ওখা বন্দর থেকে রওনা দেয় ওই জাহাজগুলি। রাতের অন্ধকারে করাচি উপকূল থেকে ৭০ মাইল দূরে পৌঁছায় ভারতের নৌবহর। মুহূর্তের মধ্যে অ্যান্টিশিপ মিশাইল দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয় পাকিস্তানি নৌসেনার যুদ্ধজাহাজ পিএনএস খাইবার। পাশাপাশি ধ্বংস করে আরও বেশ কয়েকটি জাহাজ। এই বিশেষ অভিযানের জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী সম্মানিত করে জয়ী যুদ্ধ জাহাজের সকল সেনা ও আধিকারিকদের। এই বিশেষে দিনটিকে স্মরণ করেই প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর পালিত হয় নৌসেনা দিবস। এই উপলক্ষে আজ ইন্ডিয়া গেটের সামনে কুচকাওয়াজ করেন নৌসেনার জওয়ানরা। পাশাপাশি, দেশের বেশ কয়েকটি সমুদ্র উপকূলে করা হয় বিশেষ মহড়া।
ওই অভিযানের পরই পাক সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়ে। রাওয়ালপিণ্ডি সাফ বুঝে যায় যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রক্ষা করতে পারবে না তারা। তবুও কয়েকদিন লড়াই চালিয়ে যায় ঢাকার পাক বাহিনী। কিন্তু সেসরক্ষ হয় না। ১৬ ডিসেম্বর ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেন পাক সেনানায়ক এএকে নিয়াজি। পাকিস্তানের ইতিহাসে আজও ওই লজ্জাজনক ইতিহাস ভারতীয় ফৌজের সাহসিকতার পরিচয় হয়ে রয়ে গিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান ভাবতে পারেনি যে ভারত করাচি বন্দরে হামলা চালাতে সক্ষম হবে। কিন্তু এহেন জটিল অভিযান সঠিকভাবে সফল করে পাক সেনার রসদ ও জ্বালানির ভাণ্ডার নষ্ট করে দিতে সক্ষম হয়েছিল ভারতীয় নৌসেনা। যার প্রভাব যুদ্ধক্ষেত্রে পাক সেনার পরাজয়ের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.