সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নির্বাচনী জনসভায় একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে শিরোনামে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কখনও পুলওয়ামার শহিদদের নামে ভোট চেয়ে, নেহেরু ও গান্ধী পরিবারকে কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছেন। কিন্তু প্রত্যেকবারই নির্বাচন কমিশন নরেন্দ্র মোদিকে ক্লিনচিট দিয়েছে। নীতি আয়োগের মতো সরকারি সংস্থাকেও ভোটের কাজে লাগিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে এবার ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধীকে যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন তাতে কংগ্রেস তো বটেই, দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এমন মন্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। তবে এই পরিস্থিতিতে দেশের আরেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীর রাজীব গান্ধী সম্পর্কে করা বহুদিন আগের একটি মন্তব্যের উদাহরণ দিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে রাজনৈতিক সৌজন্যতার পাঠ নিতে বলছে ওয়াকিবহাল মহল। গতবছর প্রয়াত ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ী অনেকদিন আগে রাজীব গান্ধীকে নিয়ে একটি সৌজন্যতামূলক মন্তব্য করেছিলেন। ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের রাজনৈতিক সৌজন্যবোধের দৃষ্টান্ত দিয়ে এখন তাঁরই দলের নরেন্দ্র মোদির নিম্নরুচির মন্তব্যের সমালোচনা করছে বিশেষজ্ঞরা।
[আরও পড়ুন: ‘কর্মফলের জন্য প্রস্তুত হন মোদিজি’, বাবাকে নিয়ে মন্তব্য করায় শ্লেষ রাহুলের]
কী এমন বলেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী? প্রবীণ বিজেপি নেতার সঙ্গে সংসদের ভিতরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায় হলেও, ব্যক্তিগত জীবনে ছিল ঠিক তার উলটোটা। রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে দুজনের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা তখন সংসদের বাইরে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল। বাজপেয়ী বলেছিলেন, রাজীব গান্ধীই নাকি তাঁকে মার্কিন মুলুকে কিডনির চিকিৎসার জন্য সাহায্য করেছিলেন। লেখক উল্লেখ এনপির লেখা ‘দ্য আনটোল্ড বাজপেয়ী: পলিটিসিয়ান এন্ড প্যারাডক্স’ বইতে সেকথা বর্ণিত ছিল। বাজপেয়ী বলেছিলেন, তাঁর অসুস্থতার কথা জানতে পেরে একদিন রাজীব গান্ধী তাঁকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠান। চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে একথা জানতে পেরে, রাজীব বাজপেয়ীকে বলেন, তিনি তাঁকে রাষ্ট্রসংঘের প্রতিনিধি দলে শামিল করছেন। যাতে বাজপেয়ী তাঁর সঙ্গে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন। সেই সূত্রে তখন নিউইয়র্কে গিয়ে কিডনির চিকিৎসা করান বাজপেয়ী। যে কারণে তিনি সবসময় বলতেন রাজীবের জন্যই তিনি প্রাণে বেঁচেছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী নাকি বিজেপির অন্য সদস্যদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, চিকিৎসা সম্পূর্ণ হওয়ার পরই দেশে ফিরবেন বাজপেয়ী। উল্লেখ্য, তখন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা ছিলেন বাজপেয়ী।
[আরও পড়ুন: ‘আপনার বাবা পয়লা নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত’, উত্তরপ্রদেশের সভায় রাহুলকে খোঁচা মোদির]
পরবর্তী সময়ে এক প্রখ্যাত সাংবাদিককেও এক সাক্ষাৎকার সেই উপকারের কথা বলেছিলেন বাজপেয়ী। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রাজীবের সেই ঋণ কোনওদিন ভুলবেন না জানিয়েছিলেন বাজপেয়ী। বহু পুরনো ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে রাজনৈতিক শিষ্টাচারিতার পাঠ দিতে চাইছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরই দলের প্রবাদপ্রতীম পুরুষ রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে রাজীব গান্ধীর ঋণের কথা কোনওদিন ভুলতে না পারলেও বর্তমান কাদা ছোঁড়াছুড়ির স্রোতে ভেসে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন নিম্নরুচি পোষণ করার বিরোধিতায় সরব হয়েছে সব দলের প্রতিনিধিরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.