ছবি: প্রতীকী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশে জরুরি ভিত্তিতে শর্তসাপেক্ষে দু’টি করোনা টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও সেগুলি পুরোপুরি নিরাপদ। টিকায় অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সুরক্ষার সঙ্গে কোনও আপস করা হয়নি এবং তা ১১০ শতাংশ নিরাপদ বলে জানিয়েছেন ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) ডা. ভিজি সোমানি। রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে দুই করোনা টিকাকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তিনি।
‘জরুরি ভিত্তিতে’ অনুমোদনের বিষয়টি সামনে আসতেই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই কোনও কোনও মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সেই প্রসঙ্গে ডা. ভিজি সোমানি (VG Somani) বলেন, “একটি বিষয়ে আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন যে ভ্যাকসিনের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সংশয় থাকলেও আমরা তাকে কখনওই অনুমোদন দিই না। ভ্যাকসিন ১১০ শতাংশ নিরাপদ।” সেই সঙ্গেই তিনি আরও বলেন, “টিকার ছোটখাটো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো থাকেই। যেমন টিকা নেওয়ার জায়গার আশপাশে অল্পবিস্তর ব্যথা, সামান্য জ্বর আসা, বমিবমি ভাব, এগুলো তো প্রায় সব ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। এর বাইরে সবটাই গুজব।”
করোনার টিকায় পুরুষত্বহীনতা নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে ইতিমধ্যেই। এদিন সেই আশঙ্কা একেবারেই অমূলক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন সোমানি। পাশাপাশি এদিনই আরেকটি কোভিড ভ্যাকসিন জাইডাস ক্যাডিলার ‘জাইকোভ-ডি’র তৃতীয় পর্বের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অনুমোদন দিয়েছে ডিসিজিআই (DCGI)। এই ভ্যাকসিনটির প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়ালে দেখা গিয়েছে, এটি নিরাপদ, ভাল, সহনশীল এবং রোগ প্রতিরোধী। তৃতীয় পর্বে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে এই টিকা দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, ‘জাইকোভ-ডি’ হবে তিন ডোজের।
জরুরি ভিত্তিতে ছাড়পত্র পাওয়া সেরামের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড (Covishield)’ এবং ভারত বায়েটেক ও আইসিএমআর-এর তৈরি ‘কোভ্যাক্সিন (Covaxin)’ হবে দু’টি ডোজের। কোভিশিল্ড অন্য নামে ইতিমধ্যেই ব্রিটেনে ছাড়পত্রও পেয়েছে। কিন্তু, কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের রিপোর্ট এখনও প্রকাশ্যে আসেনি কিংবা সেটি কত শতাংশ কার্যকর, সে সব তথ্য ছাড়াই চূড়ান্ত অনুমোদনের কথা ঘোষণা করেছে ডিসিজিআই। অন্যদিকে কোভিশিল্ডের কার্যকারিতা ৭০ .৪২ শতাংশ বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে কোভ্যাক্সিন নিয়ে নানা দিকে ওঠা প্রশ্নে গুরুত্ব দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার, এদিন রাতেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভারত বায়োটেককে কোভ্যাক্সিন তৈরি করার জন্য লাইসেন্স দিয়ে দিয়েছে ডিসিজিআই। তবে, একই সঙ্গে ভারত বায়োটেককে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের শেষ পর্যন্ত এটি কতটা নিরাপদ, কার্যকর এবং রোগপ্রতিরোধী, সেই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য জানানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন কোভ্যাক্সিনকে জরুরি ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইসিএমআরের ডিজি বলরাম ভার্গবও। তিনি বলেছেন, “আমরা জানি যে ভাইরাসের মিউটেশন হচ্ছে। এমনকী স্পাইক প্রোটিনের ক্ষেত্রেও তা হচ্ছে। ফাইজার ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে, তারা নিজেদের ভ্যাকসিনকে মডিফাই করবে এবং তার জন্য ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু, কোভ্যাক্সিন যেহেতু পুরো ভাইরাসটিকেই মেরে ফেলে তাই এটি মিউট্যান্ট স্ট্রেনের উপর কাজ করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।” এদিনই অবশ্য প্রথম নয়, বিশেষজ্ঞ কমিটি শনিবার কোভ্যাকসিনকে অনুমোদন দেওয়ার যে সুপারিশ করেছিল, সেখানেও এই নতুন স্ট্রেনের বিষয়টির উল্লেখ ছিল। জানা গিয়েছে, ব্রিটেন থেকে আগত করোনার সুপার স্প্রেডার প্রজাতির সন্ধান যে ভারতেও ইতিমধ্যে পাওয়া গিয়েছে, সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই সরকার কোভ্যাক্সিনকে ছাড়পত্র দিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.