সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এদেশে পুত্রসন্তানকেই ‘বংশের প্রদীপ’ বলে মনে করেন এমন মানুষের সংখ্যা আজও কম নয়। প্রতিটি ভ্রূণই যে বিপুল সম্ভাবনার বীজ, তা নিয়ে বার বার প্রচার করেও ‘ক্ষত’ সারানো যায়নি। সেই ভয়াবহতার এক মর্মান্তিক ছবি বছর চারেক আগে দেখেছিল উত্তরপ্রদেশ। পাঁচবার কন্যাসন্তান প্রসবের পর ষষ্ঠবার স্ত্রীর গর্ভে পুত্র না কন্যা কোন সন্তান এসেছে তা দেখতে পেট চিরে ফেলেছিল যোগীরাজ্যের এক ব্যক্তি। প্রবল রক্তক্ষরণ সত্ত্বেও প্রাণে বেঁচে যান মহিলা। কিন্তু মৃত্যু হয় গর্ভস্থ শিশুটির। অবশেষে সেরাজ্যের এক আদালত তাকে আজীবন কারাবাসের দণ্ড দিল শুক্রবার।
কন্যাভ্রূণ হত্যা এবং কন্যার জন্ম দিলে মায়ের উপরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার এমনকী হত্যা পর্যন্ত করার প্রবণতা এদেশে আজও এক বিশ্রী অসুখ হয়ে থেকে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ওই ব্যক্তি, পান্নালালও সেই দলেরই একজন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে স্ত্রী অনীতার সঙ্গে সে যা করেছিল, তা সত্যিই বীভৎস ও অকল্পনীয়। ২২ বছরের দাম্পত্যে পাঁচটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন অনীতা। প্রতিটি সন্তানই কন্যাসন্তান। আর এই কারণেই তাঁর সঙ্গে নিয়মিত খারাপ ব্যবহার করত পান্নালাল। চাইত পরের সন্তান যেন পুত্র হয়। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে অন্তঃসত্ত্বা হন অনীতা। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও জানতে পেরেছিলেন, জামাই পান্নালাল মেয়েকে হুমকি দিয়েছে এবার ছেলে না হলে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে পুত্রসন্তানের বাবা হওয়ার!
ঘটনার দিনও এই সব বিষয়কে কেন্দ্র করেই অশান্তি চরমে পৌঁছায়। পান্নালাল হুমকি দিতে থাকে, সে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেট কেটে দেখবে ভিতরে ছেলে আছে না মেয়ে! কেবল বলা নয়, সত্যি সত্যি ধারালো একটা অস্ত্র নিয়ে সে চড়াও হয় অনীতার উপরে। এত গভীর ভাবে পেটটি কেটে যায়, নির্যাতিতার অন্ত্র পেটের বাইরে এসে ঝুলতে থাকে। তিনি ওই অবস্থাতেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। কাছেই ছিল তাঁর দাদার দোকান। তিনি বোনকে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসতে দেখে এগিয়ে আসেন। সঙ্গে সঙ্গে চম্পট দেয় পান্নালাল। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অনীতাকে। শেষপর্যন্ত তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও প্রাণে বাঁচানো যায়নি গর্ভস্থ সন্তানকে। জানা গিয়েছে, সেই সন্তানটি ছিল পুত্রসন্তান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.