সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চুক্তি তো সই হল! কিন্তু তা কার্যকর হবে তো? রুশ-ভারত ‘এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা চুক্তি’ স্বাক্ষর হতেই এই প্রশ্নে তোলপাড় দেশ। কারণ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার (পড়ুন ক্যাটসা অর্থাৎ কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভার্সারিস থ্রু স্যাংশন অ্যাক্ট) ফলে সৃষ্টি হওয়া অর্থনৈতিক জটিলতা। যার ফাঁসে জডি়য়ে বিশ বাঁও জলে পড়তে পারে ৫.৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নয়াদিল্লির তরফে মস্কোর হাতে তুলে দেওয়ার গোটা প্রক্রিয়াই। যদিও বিশেষজ্ঞদের ভাবনা-চিন্তা একটু হলেও অন্যরকম। তাঁদের মতে, আপাত জটিলতা সৃষ্টি হলেও এই বহুচর্চিত চুক্তি আদপে আতসের তলায় রেখে বিচার করবে ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বাঁধন ঠিক কতটা পোক্ত?
[‘কাফের বলেই ধর্ষণ করা হত আমাদের’]
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ মহলের প্রতিক্রিয়া, প্রতিরক্ষা খাতে হওয়া এই চুক্তি নিয়ে নিশ্চয়ই ওয়াশিংটনের সঙ্গে কোনও বোঝাপড়া হয়েছে নয়াদিল্লির। যার প্রেক্ষিতে ভারতের উপর কোনও নেতিবাচক পদক্ষেপ আমেরিকা নেবে না বলেই অনুমান প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।
প্রসঙ্গত, ৫.৪৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় হিসাব করলে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। ঠিক এই বিপুল অর্থের মহার্ঘ চুক্তিপত্রেই শুক্রবার সই করেছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে স্বাক্ষরিত সেই ঐতিহাসিক চুক্তির বলেই নয়াদিল্লি মস্কোর কাছ থেকে পাঁচটি এস-৪০০ ব্যাটারি পেতে চলেছে ২০২০ সালের গোড়ায়, চিন এবং পাকিস্তান সীমান্তে সেগুলি বসানো হবে। কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত হয় সেই ব্যাটারির বিনিময়ে মস্কোর হাতে অর্থ তুলে দেওয়া নিয়ে। সাধারণত, চুক্তি সই করার দিন কয়েকের মধ্যেই যন্ত্রের নির্মাণ শুরু করে দেওয়ার জন্য বিদেশি ‘সাপ্লায়ার’কে ১৫ শতাংশ অর্থ ‘অ্যাডভান্স’ হিসাবে দিতে হয়। ঘটনাচক্রে, ‘এস-৪০০’-এর প্রস্তুতকারক রুশ সংস্থা ‘আলমাজ-আন্তে’ আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে। এবার ‘ক্যাটসা’ আইন নিয়ে সুর নরম করে ওয়াশিংটন এক্ষেত্রে ভারতকে দুশ্চিন্তার হাত থেকে কিছুটা বাঁচালেও অর্থ স্থানান্তর নিয়ে রুশ সংস্থাটির উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েই যাচ্ছে। আর এই আর্থিক জটিলতার কারণেই মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে বহুচর্চিত এই চুক্তি কার্যকর করার বিষয়টি। সবচেয়ে বড় কথা, রাশিয়ার সঙ্গে স্বাক্ষরিত যে যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলতি বছরে হচ্ছে, সেগুলির ক্ষেত্রেও আর্থিক সমস্যা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থ বকেয়া রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স বিশেষজ্ঞ কম্যান্ডো (অবসরপ্রাপ্ত) সি উদয় ভাস্করের মতে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের এই চুক্তি আদপে একটি পরীক্ষা, যা ভারত-মার্কিন সম্পর্কের বন্ধন কতটা দৃঢ়, তা নির্ণয় করবে। তাঁর মতে, “টু প্লাস টু আলোচনার সময়ই মোদি সরকার আমেরিকাকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন যে, নয়াদিল্লির সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং সেটা ১৯৬০ সাল থেকে চলে আসছে। কাজেই যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এই বিষয়ে ওয়াশিংটন নিশ্চয়ই দৃষ্টিপাত করবে বলেই আমি মনে করি। তাছাড়া এই বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে মার্কিন কংগ্রেসের সামনে আমেরিকার প্রশাসন একটা শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। কিন্তু ঘটনা হল, “মার্কিন কংগ্রেসের দুই দলেরই ভারতের প্রতি সমর্থন রয়েছে।”
[চিন থেকে নিখোঁজ ইন্টারপোল প্রধান, ঘনাচ্ছে রহস্য]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.