সৌরভ দত্ত, মুম্বই: ঠিক যেন এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। সকাল পৌনে দশটার বোরিভলি স্টেশন যেন কলকাতার দমদম। একের পর এক ট্রেন এসে দাঁড়াচ্ছে আর হুড়মুড়িয়ে নামছে মানুষ, উঠছেও। নিমেষে স্টেশন ছেড়ে যে যার পথে। কিন্তু সোমবার বোরিভলি স্টেশন চত্বরে এ যেন অন্য সকাল। সাদা ডিজাইনার পালাজো আর কচি কলাপাতায় রাঙানো কুর্তিতে চনমনে উর্মিলা স্টেশন চত্বরে পা দিতেই থমকে গেল ভিড়। ‘রঙ্গিলা’-র হিট নায়িকা হাত নাড়তেই জবাবে উড়ে এল উচ্ছ্বাস। এমনকী ফুল-মালাও। জবাবে সপ্রতিভ নায়িকাও, “আমি উর্মিলা মাতণ্ডকর। এতদিন আমাকে শুধু পর্দায় দেখেছেন। এবার আমি সরাসরি আপনাদের সামনে। কিছু করতে চাই।” ততক্ষণে মোবাইলে ছবি শিকারিদের ঘেরাটোপে প্রায় বন্দি তিনি। উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসতে ভাসতেই কলকাতার এই ‘পত্রকার’কে জানিয়ে দিলেন, “বাংলায় লড়াকু টিএমসি নেত্রীর কথা অনেক শুনেছি। সুযোগ পেলেই মমতাদির সঙ্গে দেখা করতে চাই।”
বরিভেলির তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের সামনের চত্বরে উর্মিলাকে ঘিরে উচ্ছ্বাস তখন তুঙ্গে। কংগ্রেসের বোরিভলি জেলা সভাপতি অশোক সুত্রালের নেতৃত্বে চলছে নাড়াবাজি ‘চৌকিদার চোর হ্যায়…’। প্ল্যাটফর্মের জমাটবাঁধা ভিড়ে আচমকাই তখন গুঞ্জন। একটু একটু করে যেন জেহাদ, ‘মোদি মোদি মোদি…’। নিমেষে বদলে গেল ছবি। উর্মিলাকে ঘিরে থমকে যাওয়া কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা স্লোগান আরও চড়িয়ে তেড়ে এলেন প্ল্যাটফর্মে। নাছোড় মোদি অনুগামীর দলও। কয়েক সেকেন্ডেই কার্যত ধুন্ধুমার। আরপিএফের বিশাল বাহিনী এসে সামাল দেওয়ার আগেই খুচরো চড়-চাপড়ও চলল ধাক্কাধাক্কিতে। প্রথমে মনে হয়েছিল আরপিএফের তৎপরতায় অচিরেই মিটে যাবে। কিন্তু দু’পক্ষই যে নাছোড়! ততক্ষণে কানাঘুসো ছড়িয়ে গিয়েছে, এ তল্লাটে ছড়িয়ে থাকা গুজরাটের বহু মানুষই বোরিভলি ট্রেনপথে ডেলি প্যাসেঞ্জার। তারাই নাকি কংগ্রেসকে ‘পাঙ্গা’ নিতে মোদির নামে ‘নাড়া’ তুলেছেন। খানিকক্ষণ তো চলল গলাবাজি। একপক্ষ স্লোগান তুললেই চেঁচিয়েই তা চাপা দেওয়ার চেষ্টা অপর পক্ষের। ভাগ্যিস সময়মতো এসে পড়েছিলেন পুলিশের কর্তারা। কোনওরকমে হাতাহাতি সামাল দিলেন তাঁরা।
[ আরও পড়ুন: গোরক্ষপুরে চমক বিজেপির, গেরুয়া শিবিরের সৈনিক জনপ্রিয় অভিনেতা ]
তথ্য বলছে, মুম্বই উত্তরের আওতাধীন একটি ছাড়া বাকি সব বিধানসভাই বিজেপি–শিবসেনা জোটের দখলে। বিজেপি প্রার্থী গোপাল শেট্টি পোড় খাওয়া নেতা। গতবার জিতেছেন বিপুল ভোটে। এবারও এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। দীনেশ মিশ্র, লাজপত রাওদের মতো অটোচালক বা সবজি বিক্রেতারা গোপালকে ‘অহংকারী’ মনে করলেও গোপালের সমর্থন এলাকায় আছে বইকি! আর স্টেশনের ওই যে ‘নাড়াবাজ’রা তারাও তো গোপালেরই পক্ষে। নোটবন্দি থেকে জিএসটি, ‘মেহেঙ্গা’ নিয়ে ক্ষোভ আছে। আবার মুখে মুখে ‘মোদি’ও আছে। গতবার এই আসনে কংগ্রেস লড়েনি। প্রতিপক্ষ উর্মিলাকে নিজেও ভাষণে বিঁধেছেন গোপাল। জবাবও দিয়েছেন উর্মিলা। এবার লড়াইয়ে কংগ্রেসের বাজি, “আমাদের উর্মিলা ‘তাই’ আছেন…।” দলের ভরসা সেই উর্মিলা জনতার মন কেড়ে নিতে পারেন কি না, তাই দেখার।
[ আরও পড়ুন: দিল্লিতে জোট নিয়ে ঘুরিয়ে কেজরিকে খোঁচা রাহুলের, প্রকাশ্যে কোন্দল ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.