সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মথুরায় পুলিশের সঙ্গে জবরদখলকারীদের সংঘর্ষের জেরে আরও পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ এই নিয়ে ঘটনায় মোট ২৯ জনের মৃত্যু হল৷ সময় যত গড়াচ্ছে, ততই বিস্ফোরক সমস্ত তথ্য উঠে আসছে মথুরার ঘটনায়৷ বিশেষ সূত্রে খবর, আজাদ ভারত বৈদিক বৈচারিক ক্রান্তি সত্যাগ্রহী সংগঠনটি সম্পর্কে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে প্রায় ৪০ পাতার ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল৷ সংগঠনের সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের ভিডিও জমা দেওয়া হয়েছিল জেলা প্রশাসনের কাছে৷ জওহর বাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িত আজাদ ভারত বৈদিক বৈচারিক ক্রান্তি সত্যাগ্রহী সংগঠনটি কার্যত সমান্তরাল প্রশাসন চালাত সেখানে৷ ছিল নিজস্ব বিচারব্যবস্থা, নিজস্ব সংবিধান, কারাগার এমনকী বেশ কয়েক ব্যাটালিয়ন খাকি উর্দিধারী সৈনিকও৷ বালক-কিশোরদেরও অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হত বলে দাবি করেছেন এক শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্তা৷
ডি সি মিশ্র নামে ওই পুলিশ আধিকারিক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, আট বছরের বালককেও জবরদখলকারীরা অস্ত্র ধরতে বাধ্য করেছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে৷ ২০১৪ থেকে জওহর বাগের ২৮০ একর দখল করে রামবৃক্ষ যাদবের নেতৃত্বে কার্যত সমান্তরাল রাষ্ট্র পরিচালিত হত৷ বাইরের দুনিয়ার কাছে যে পার্কে প্রবেশাধিকার ছিল একেবারে বন্ধ৷ তেমনই পার্কের বাসিন্দারাও বাইরের জগত্ সম্পর্কে কোনও খোঁজ রাখতেন না৷ ওই অবৈধ কলোনির বাসিন্দা ৯টি বালককে শনিবার শহরের একটি হোমে পাঠানো হয়েছে৷ লড়াইয়ের সেই রাতের ভয়াবহ আতঙ্ক এখনও স্পষ্ট তাদের মনে৷ তারা জানিয়েছে, “চারদিকে বোমা পড়ছে৷ আমরা কয়েকজন গাছের পিছনে লুকিয়ে পড়লাম৷ তারপর পাথর ছোড়া, গুলি চালানো শুরু হল৷” উদ্ধার করার পর প্রথমে তাদের গোবিন্দনগর জেলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ পরে ঠাঁই হয় সরকারি হোমে৷ একটি বালক জানিয়েছে, চার মায়ের সঙ্গে জেলে রয়েছে আট ও বারো বছরের তার দুই ভাই৷
যদিও পুলিশের দাবি, সংঘর্ষের সময় আটক প্রতিটি বাচ্চাকেই মথুরা ও আগ্রার বিভিন্ন হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ আর একটি বালিকাকে জওহর বাগে নিয়ে এসেছিল তার কাকিমা৷ “এখানে রামবৃক্ষ যাদব বলে একটা লোক ছিল৷ তিনি বলতেন, ওই লোকটা ভারতকে মুক্ত করবেন৷ প্রত্যেককে একটি স্বর্ণমুদ্রা দেবেন তিনি৷ ভারতে এবার থেকে ওই মুদ্রাই চালু হবে৷” রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপ্লবের ধুয়া তোলা সেই রামবৃক্ষ সংঘর্ষে নিহত হয়েছে৷ তার নামে হত্যা ও জমি দখলের অভিযোগে আটটি মামলা হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, হোমে থাকা বালক-বালিকাদের তুলে দেওয়া হবে নিকটাত্মীয়দের কাছে৷ জেলবন্দি বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পাবে তারা৷ আত্মীয়ের সন্ধান না মিললে রাখা হবে হোমেই৷ এদিকে, সংঘর্ষে নিহত পুলিশ সুপার মুকুল দ্বিবেদী ও স্টেশন হাউস অফিসার সন্তোষ যাদবের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার৷ এবার তাঁদের পরিবারের জন্য আরও ৫০ লক্ষ টাকা করে সাহায্য তুলে দেবেন বলে স্থির করেছেন রাজ্যের পুলিশ ও সরকারি কর্মচারীরা৷ জেলাশাসক রাজেশ কুমার বলেন, “অফিসার ও কর্মীরা একদিনের বেতন এই খাতে জমা দেবেন৷ এক কোটি টাকা উঠে যাবে৷” জওহর বাগ ভবিষ্যতে মুকুল দ্বিবেদীর নামে উৎসর্গ করা হতে পারে বলেও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.