সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নরখাদক নেকড়ের হানায় আতঙ্কে উত্তরপ্রদেশ। ৪টি নেকড়ে ধরা পড়লেও ত্রাস কমেনি। যোগীরাজ্যের বাহরাইচ জেলার কয়েকটি গ্রামে গত মাস দুয়েকের মধ্যেই ৯টি শিশুর প্রাণ গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে এক মহিলারও। নেকড়ের হানায় এভাবে বার বার রক্তাক্ত হয়েছে গ্রামগুলি। আহতের সংখ্যাও কমবেশি ৩৪। কিন্তু কেন ওই অঞ্চলে নেকড়ে এমন ভয়ংকর হামলা চালাচ্ছে?
ফরেস্ট কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয় পাঠক এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় দাবি করছেন, ”নেকড়ের স্বভাব প্রতিশোধ দেওয়া। যদি কেউ ওদের বাসা কিংবা শাবকদের ক্ষতি করে থাকে তাহলে ওরা মানুষের উপরে বদলা নিতে হামলা চালাতেই পারে।” কিন্তু এক্ষেত্রে কি তেমন কিছু ঘটেছিল? বাহরাইচের রামুয়াপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রবল বন্যায় এলাকার বহু অংশ জলের তলায় চলে গিয়েছিল। তার আগে এক আখ খেতের ভিতরে একটি গুহায় তাঁরা নেকড়ের শাবক দেখেছিলেন। সম্ভবত, বৃষ্টির তোড়ে জল ঢুকে যাওয়া ওই গুহার মধ্যে থাকা শাবকটি মারা গিয়েছে। এবং ওর মা-বাবা এর জন্য মানুষকে দায়ী করে বদলা নিতে হামলা চালাতে শুরু করেছে। অন্য নেকড়ে শাবকও মানুষের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা।
এমনিতে নেকড়ে শিকারে অত্যন্ত পটু এক পশু। অন্য বড় বড় হিংস্র জানোয়ারের তুলনায় তারাও মানুষ শিকারে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু তবুও এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত বিরল। সাধারণত ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া নেকড়ে লোকালয়ে ঢুকে হামলা চালায় না। বিশেষজ্ঞরা এমনও মনে করছেন, অরণ্যের উপরে মানুষের দখলদারি, বন উজাড় হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় বিপণ্ণ হয়েই বাহরাইচে এভাবে হামলা চালাচ্ছে নেকড়ের দল।
তবে ইতিহাস সাক্ষী, উত্তরপ্রদেশে এর আগেও নেকড়ের উপর্যুপরি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৬ সালে এই রাজ্যের প্রতাপগড়েই বার বার নেকড়ের দল উৎপাত শুরু করেছিল। আক্রান্ত হয়েছিলেন বহু মানুষ। এছাড়াও বিহার, মধ্যপ্রদেশ (সম্প্রতিই এখানে নেকড়ের হামলার ঘটনা ঘটেছে) এবং পশ্চিমবঙ্গেও নেকড়ের মানুষকে আক্রমণের ঘটনার কথা জানা যায়। এর পিছনে একটা কারণ যদি জঙ্গল কেটে ফেলা হয়, পাশাপাশি রয়েছে অন্য কারণও। মনে করা হয়, পরিত্যক্ত নেকড়ের সঙ্গে কুকুরের সঙ্গমে জন্ম নেওয়া সংকর প্রাণীরাও লোকালয়ে হামলা চালায়। তার কারণ, মানুষের প্রতি তাদের ভয় না থাকা। তবে এই ধরনের প্রাণীগুলিকে ধরাও সহজ, বন্য নেকড়ের তুলনায়। যদিও বাহরাইচের ঘটনায় প্রতিশোধ তত্ত্বই সবচেয়ে জোরাল হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.