সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিহার হোমকাণ্ডের পর এবার যোগীর রাজ্যে হোমের কিশোরীদের দিয়ে মধুচক্র চালানোর অভিযোগ উঠল। ঘটনাস্থল উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া। আশ্রিত কিশোরীদের যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠল হোমের মালকিন ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মালকিন গিরিজা ত্রিপাঠী ও তার স্বামী মোহন ত্রিপাঠীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হোম থেকে ২৪ জন কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বাকি ১৮ জনের কোনও খোঁজ মেলেনি। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরেই দৃশ্যত ক্ষুব্ধ হয়ে দেওরিয়ার জেলাশাসক সুজিত কুমারকে সাসপেন্ড করেছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। কিশোরীদের খোঁজে শুরু হয়েছে তদন্ত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেওরিয়া জেলাজুড়ে ছড়িয়েছে উত্তেজনা।
জানা গিয়েছে, সরকারি বিধি-নিষেধ মানছিল না হোমটি। তাই সরকার থেকে আসা অনুদান বন্ধ হয়ে যায়। এই দেখে ফের প্রশাসনের কাছে দরবার করেছিল ত্রিপাঠী দম্পতি। বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে সরকারি আধিকারিকদের একটি দল হোম পরিদর্শনে আসে। তবে পরিস্থিতি দেখে তাঁরা সন্তুষ্ট হননি। এরপরেই ২০১৭-তে হোমটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেয় উত্তরপ্রদেশ সরকার। তবে অনুদান বন্ধ হলেও বিনা রেজিস্ট্রেশনে বেআইনিভাবে হোমটি চলছিল। অভিযোগ, হোমের কিশোরীদের পরিচারিকার মতো খাটানোর পাশাপাশি রাত হলেই যৌনকর্মীর কাজ করতে বাধ্য করা হত। এই তালিকায় পড়ত সাধারণত ১৫ থেকে ১৮ বছরের কিশোরীরা। মূলত সন্ধ্যা হলেই হোমের অদূরে বিভিন্ন গাড়ি এসে থামত। মালিকের নির্দেশে একেকটি গাড়িতে চড়ে চলে যেত নির্যাতিতা কিশোরীরা। সকালবেলা শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত কিশোরীদের হোমের বাইরে নামিয়ে দিয়ে যেত। নির্যাতিতারা হোমে ফিরেই কান্নায় ভেঙে পড়ত। সন্ধ্যা হলেই ফের জোর করে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হত। এভাবেই দিনের পর দিন চলছিল নরক যন্ত্রণা। অত্যাচর সহ্য করতে না পেরে দিন কয়েক আগেই হোম থেকে পালিয়ে যায় এক কিশোরী। লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারাই তাঁকে থানায় নিয়ে যান। সংশ্লিষ্ট হোমটিতে দীর্ঘদিন ধরে ঠিক কী চলছে, থানায় পৌঁছে তা উগরে দেয় নির্যাতিতা। গুরুতর অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্য প্রশাসনকে জানায় দেওরিয়া থানার পুলিশ।
এদিকে গত সপ্তহাহেই প্রকাশ্যে এসেছে বিহার হোমকাণ্ডের ঘটনা। এনিয়ে নীতিশকুমার সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের মধ্যে তীব্র চাপানউতোর শুরু হয়েছে। এই ঘটনার পরেই রাজ্যের হোমগুলির পরিস্থিতি সরজমিনে দেখতে তৎপরতা দেখায় উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। সেইমতো রাজ্যের প্রত্যেকটি সরকারি হোমেই অভিযান চালানো হয়। দেওরিয়াও বাদ যায়নি। স্থানীয় থানার পুলিশ অভিযানে এলে ত্রিপাঠী দম্পতির দুর্ব্যবহারের মুখে পড়েন বলে অভিযোগ। ঠিক তার পরেপরেই হোম থেকে পালিয়ে যায় কিশোরী। হোমের মালকিনের কুকীর্তি অভিযোগ পাওয়ার পর কোমরবেঁধে নামে পুলিশ রবিবার রাতেই হোমটিতে আচমকা অভিযান চালানো হলে হাতেনাতে ধরা পড়ে গিরিজা ত্রিপাঠী। বেগতিক দেখে পালানোর চেষ্টা করেছিল মোহন ত্রিপাঠী। তবে পুলিশি তৎপরতায় তা আর পেরে ওঠেনি। দুজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতিতাদের উদ্ধার করে মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উধাও হয়ে যাওয়া কিশোরীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.