সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উন্নাওয়ের ধর্ষিতাকে প্রাণে মারার জন্যই দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তাঁর মা। পাশাপাশি এই মামলার তদন্ত সিবিআই-কে দিয়ে করানোরও দাবি তুললেন তিনি। রবিবার বিকেলে জেলবন্দি কাকাকে দেখতে রায়বরেলির জেলে যাচ্ছিলেন উন্নাওয়ের ধর্ষিতা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর কাকিমা, এক আত্মীয় ও আইনজীবী। কিন্তু, রাস্তায় তাঁদের গাড়িকে সজোরে ধাক্কা মারে একটি ট্রাক। এর ফলে প্রাণ হারান তাঁর কাকিমা ও সঙ্গে থাকা আত্মীয়। আর গুরুতর আহত হন নির্যাতিতা ও তাঁর আইনজীবী। বর্তমানে তাঁরা হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন। এই অবস্থায় দুর্ঘটনার পিছনে ধর্ষণে অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সেনেগারের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করলেন ধর্ষিতার মা। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে জেলবন্দি বিজেপি বিধায়ক-সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে।
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নির্যাতিতার মা বলেন, “ওই বিধায়কই এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে আমি জানতে পেরেছি। উনি জেলের মধ্যে থাকলেও ওনার কাছে ফোন রয়েছে। ফলে খুব সহজেই জেল থেকে বসে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন উনি। সেঙ্গার জেলে থাকলেও ওনার সঙ্গী ও অনুগামীরা বাইরে রয়েছে। এর ফলে উনি এবং ওঁর লোকেরা আমাদের ভয় দেখাচ্ছেন। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
যদিও এপ্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রধান ওপি সিং বলেন, “প্রাথমিকভাবে এটা দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তবে মেয়েটির পরিবার যদি চায় তাহলে সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করানোর বিষয়ে আমরা সবরকম সাহায্য করব।”
যে ট্রাকটি নির্যাতিতাদের গাড়িতে ধাক্কা মেরেছে তার সামনে থাকা নম্বর প্লেটটি কালো কালি দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জানা গিয়েছে, সরকারের তরফে তাঁকে যে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়েছিল দুর্ঘটনার সময় তিনি ছিলেন না। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওপি সিং বলেন, “বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গাড়ির চালক ও খালাসিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তিনি জানান, প্রতিটি কোণ থেকেই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু প্রাথমিক তদন্ত থেকে এটা দুর্ঘটনা বলেই মনে হচ্ছে। অন্যদিকে গাড়িতে জায়গা হবে না বলেই নিরাপত্তারক্ষীকে যেতে বারণ করেছিলেন ধর্ষিতা ও তাঁর বাড়ির লোক। তাই তিনি যাননি। যদিও এই সব বিষয়কে ষড়যন্ত্রের অংশই হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন নির্যাতিতার মা।
বিষয়টি জানতে পারার পর এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় থেকে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন সবাই। যোগী সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে একাধিক টুইট করেছেন প্রিয়াঙ্কা। তার মধ্যে একটিতে লেখা আছে, এটাই কী সুশাসনের নমুনা? একজন মহিলাকে বিজেপি বিধায়ক ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ। আর তাঁর বাবাকে পুলিশ হেফাজতে পিটিয়ে মারা হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীরও রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে গতবছর। এখন নম্বর প্লেটে কালো কালি লাগানো একটি ট্রাকের ধাক্কায় আরেক সাক্ষী তাঁর কাকিমা প্রাণ হারিয়েছেন। গুরুতর জখম হয়েছেন তাঁর আইনজীবীও। ধর্ষিতাও হাসপাতালে শুয়ে আছেন এই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে। আর এইসব ঘটনার পরেও অভিযুক্ত ব্যক্তি বিজেপি বিধায়ক হিসেবে রয়ে গিয়েছেন। অন্যদিকে বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকার ভয়মুক্ত উত্তরপ্রদেশে তৈরির কথা প্রচার করছে।
সোমবার নজরুল মঞ্চের সভা থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকারের পাশাপাশি বিজেপি নেতৃত্বকে এই ঘটনার জন্য কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। কটাক্ষ করে বলেন, “বাংলায় কিছু হলে রাজ্য সরকারের সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু, এখন উত্তরপ্রদেশে যা হচ্ছে তা অকল্পনীয়। তারপরও সবাই চুপ রয়েছে। আসলে বদনাম করার জন্যই বাংলার সমালোচনা করা হয়। কিন্তু, উত্তরপ্রদেশে কী হচ্ছে? কেন এভাবে তাঁদের মরতে হল? এর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হওয়া উচিত।”
So a woman is allegedly raped by a BJP MLA. Her father is beaten up and dies in custody. A key witness dies mysteriously last year. Now her aunt who was also a witness is killed and her lawyer is critically injured in an accident caused by a truck with blackened number plates.
— Priyanka Gandhi Vadra (@priyankagandhi) July 29, 2019
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.