Advertisement
Advertisement

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়কে একজোট হওয়ার ডাক সেনাপ্রধানের

"সময় এসে গিয়েছে, ফৈয়াজের নামে শপথ নিয়ে একজোট হতে হবে৷"

Unite against killing of Lieutenant Ummer Fayaz, Army chief General Bipin Rawat says
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 15, 2017 3:57 am
  • Updated:May 15, 2017 4:01 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিয়েবাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে লেফটেন্যান্ট উমর ফৈয়াজকে হত্যা করায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়কে একজোট হওয়ার ডাক দিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত৷ রবিবার কাশ্মীরি যুবক-যুবতীদের কাছে তিনি আর্জি জানান, পাকিস্তানের অর্থ ও মদতে পুষ্ট জঙ্গিবাদ উপত্যকার উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দিচ্ছে৷ নিজেদের ও দেশের ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখতে পাকিস্তানের প্ররোচনায় পা না দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি৷

[পাক অনুপ্রবেশকারীকে গুলি করে মারল বিএসএফ]

সেনাপ্রধান বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্যভাবে প্রচারের মাধ্যমের কিছু কাশ্মীরি যুবক-যুবতী বিপথে চালিত হচ্ছেন৷ তাঁদের ভারতীয় সেনার বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে পাকিস্তান৷” তিনি আরও জানান, সময় এসে গিয়েছে! কাশ্মীরের তামাম যুবক-যুবতীকে এবার লেফটেন্যান্ট উমর ফৈয়াজের নামে শপথ নিয়ে একজোট হতে হবে৷ তাঁর হত্যার বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে৷ টুঁটি চেপে ধরতে হবে সন্ত্রাসবাদের৷ একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন, “লেফটেন্যান্ট ফৈয়াজ এই কাশ্মীরেরই ভূমিপুত্র৷ ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে প্রবেশের জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন৷ ফৈয়াজের একান্ত নিষ্ঠা তাঁকে গতবছরের ডিসেম্বরে রাজপুতানা রাইফেলস-এ কমিশনড হওয়ার যোগ্য করে তোলে৷ মনে রাখতে হবে ফৈয়াজ একজন সাহসী যুবক৷ পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে তাঁকে জঘন্যভাবে হত্যা করা হল৷”

Advertisement

সেনাপ্রধানের আর্জি, এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিক কাশ্মীরের বাসিন্দারা৷ কাশ্মীরের যুব সম্প্রদায়কে এক জায়গায় একত্রিত হয়ে বসে, আলোচনার মাধ্যমে সঠিক পথ অনুসরণ করার আবেদন জানিয়েছেন তিনি৷ পাশাপাশি, যারা উপত্যকায় সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করারও ডাক দিয়েছেন জেনারেল রাওয়াত৷ জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ স্পষ্ট জানিয়েছে, এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পিছনে রয়েছে স্থানীয় হিজবুল অপারেটিভ আব্বাস আহমেদ ভাট ও তার তিন সঙ্গীর হাত৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ করবে সেনা, হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাওয়াত৷ তাঁর বক্তব্য, “ভুলে যাবেন না, ভারতীয় সেনা বিশ্বের অন্যতম দক্ষ সশস্ত্র বাহিনী৷ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজ না হয় কাল জঙ্গিদের ঠিকই ধরে ফেলা যাবে৷”

গত বুধবার সোপিয়ানের হার্মান চক এলাকা থেকে উদ্ধার হয় ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যাণ্ট উমর ফৈয়াজের গুলিবিদ্ধ দেহ৷ বিয়েবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন করা হয় কাশ্মীরের ভূমিপুত্র তথা তরুণ সেনা অফিসার উমরকে৷ তাঁর আদি বাড়ি কুলগাম জেলায়৷ ২২ বছরের উমর ছিলেন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক৷ কর্মসূত্রে কাশ্মীরের আখনুর জেলায় পোস্টিং ছিল তাঁর৷ তিনি ছিলেন ২ নম্বর রাজস্থান রাইফেলসের লেফটেন্যান্ট৷ সোপিয়ানে খুড়তুতো ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে আগে থেকেই ক্যাজুয়াল লিভের আবেদন করেছিলেন তিনি৷ চাকরি জীবনে এটাই ছিল তাঁর প্রথম ছুটি৷ কিন্তু তিনি, তাঁর সহকর্মী ও পরিবারের কেউই ভাবেননি যে এটাই তাঁর শেষ ছুটি হয়ে যাবে৷ জুন মাসেই ছিল তাঁর জন্মদিন৷ সামনের মাসেই ২৩ শে পা দিতেন তিনি৷ সেনা ছাউনি থেকে বেরিয়েছিলেন হাসিমুখে৷ দু দিনের মধ্যে তেরঙা জাতীয় পতাকায় ঢাকা কফিনবন্দি লাশ হয়ে ফিরলেন নিজের গ্রামে৷ গত বুধবার উমরের দেহ পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর পরিবার৷ গ্রামের হাজার হাজার শোকার্ত বাসিন্দার উপস্থিতিতে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় উমরের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়৷ উমরের কবরে মাটি দেন সেনা অফিসার ও কাশ্মীরের মন্ত্রীরা৷

[চিনকে ‘ঠান্ডা’ করতে সীমান্তে দীর্ঘতম সেতু গড়ল ভারত]

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ বিয়েবাড়িতে পাঁচ-ছয়জন অপরিচিত ব্যক্তি সেনাবাহিনীর পোশাকে এসে উমরের খোঁজ করে৷ ওই চারজনের সঙ্গে কথা বলতে বাইরে বেরিয়ে আসেন উমর৷ বেশ কিছুক্ষণ সময় কেটে যাওয়ার পরেও উমর না ফেরায় বিয়েবাড়ির লোকজন তাঁর খোঁজ শুরু করে৷ কিন্তু সেদিন রাতে আর তাঁর হদিশ মেলেনি৷ শেষ পর্যন্ত বুধবার সকালে হার্মান চক এলাকায় গুলিতে ঝাঁঝরা উমরের দেহ উদ্ধার হয়৷ অজ্ঞাতপরিচয় ওই চার সন্দেহভাজন জঙ্গির হদিশ পেতে তল্লাশি অভিযান জোরালো করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী৷ সেনা গোয়েন্দাদের দাবি, সেনাবাহিনীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতেই পরিকল্পনামাফিক উমরকে অপহরণ করেছিল হিজবুল মুজাহিদিন ও লস্কর-ই-তইবার জঙ্গিরা৷ তাঁকে দিয়ে ভারত-বিরোধী আপত্তিকর কিছু বলানোর বা লেখানোর চেষ্টা করেছিল জঙ্গিরা৷ কিন্তু উমর তা না মানায় তাঁকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়৷ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে শিক্ষা ও বার্তা দিতেই উমরকে হত্যা করেছে জঙ্গিরা৷

[বড়সড় সাফল্য ভারতীয় সেনার, গুলিতে ঝাঁজরা লস্কর জঙ্গিরা]

প্রতিরক্ষামন্ত্রক, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এই ঘটনা নজিরবিহীন৷ কারণ পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠনগুলি যাদের মধ্যে হিজবুল মুজাহিদিনের মতো স্থানীয় শক্তিশালী জঙ্গি সংগঠনও রয়েছে তারা কখনও ভূমিপুত্রদের উপর আঘাত হানে না৷ কাশ্মীরি যুবকদের খুন করে না৷ কিন্তু ভারতীয় সেনা অফিসার হওয়াতেই উমরকে খুন হতে হল৷ গত বছর সেনাবাহিনীর হাতে হিজবুল জঙ্গি কমান্ডার বুরহান ওয়ানির হত্যার বদলা নিতেই ২২ বছরের সেনা অফিসার উমরকে হত্যা করেছে জঙ্গিরা৷ কেন্দ্রীয় সরকারের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দাবি,  উপত্যকার ভূমিপুত্র হয়েও উমর ছিলেন দেশভক্ত সেনা অফিসার৷ এটাও ছিল রাগের কারণ৷ তাই তাঁকে মেরে জঙ্গিরা কঠোর বার্তা দিল, সেনাবাহিনী ও পুলিশে কর্মরত কাশ্মীরি মুসলিমদেরও ‘রেয়াত’ করা হবে না৷ কয়েকদিন আগে একটি ব্যাঙ্কের ক্যাশভ্যান লুঠ করে প্রায় ৫৩ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হয় লস্কর ও হিজবুল জঙ্গিরা৷ ঘটনাস্থলেই তারা গুলি করে মারে পাঁচ মুসলিম পুলিশকর্মীকে৷ গত দুই সপ্তাহে একাধিক ব্যাঙ্ক লুঠের ঘটনায় বেশ কয়েক জন মুসলিম পুলিশকর্মী ও সিআরপিএফ জওয়ানকে হত্যা করেছে পাকিস্তান মদতপুষ্ট জঙ্গিরা৷ এঁরা সবাই ছিলেন কাশ্মীর উপত্যকার ভূমিপুত্র৷

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement