সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মোদি সরকার স্যুট-বুটের। এ অভিযোগ শুধু রাহুল গান্ধীর নয়। বিভিন্ন সময়ে সরকারের পদক্ষেপে স্পষ্ট হয়েছে দেশের কৃষকরা তেমন গুরুত্ব পায়নি। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরাও সরকারের সে প্রবণতা চিহ্নিত করে সমালোচনা করেছেন। এই দুর্নাম ঘুচিয়েই চলতি বাজেটে কৃষক ও গ্রামীণ অর্থনীতির উপর জোর দিল মোদি সরকার।
[ কেন্দ্রীয় বাজেট ২০১৮: কোন কোন জিনিসের দাম বাড়ছে? ]
দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির গ্রাফ ক্রমশ উর্ধ্বমুখী। উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসেবে গোটা বিশ্বে নজর কাড়ছে ভারত। অথচ সে দেশেই কৃষক মরছে অনাহারে। তামিলনাড়ু থেকে মহারাষ্ট্র, দেশের কৃষক বিক্ষোভ বুঝিয়ে দিয়েছিল সরকরারে একমুখী নীতির জেরে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো আসে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত। কৃষি তো বটেই, অসংগঠিত ক্ষেত্রও প্রায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। গ্রামীণ অর্থনীতির কোমর ভাঙলে, কৃষিপ্রধান দেশের উন্নতি যে অসম্ভব, দেরিতে হলেও সে বোধদয় হয়েছে সরকারের। এতদিন বলা হত, মোদি সরকার ‘ইন্ডিয়া’ তৈরিতে ব্যস্ত। সেখানে বঞ্চিত ভারত। দুটো শব্দে এক দেশকে বোঝালেও, দেশের ভিতর যেন আছে আর এক দেশ। যেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য চরমে। দেশের ৭৩ শতাংশ সম্পদই ১ শতাংশ ধনী ব্যক্তির করায়ত্ত বলে জানিয়েছিল সমীক্ষা। এই তথ্যই যথেষ্ট ভীতিপ্রদ। গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে মন না দিলে দেশ যে চরম বিপদে পড়বে সে দেওয়াললিখন পড়তে অসুবিধা হয়নি সরকারের। এ নিয়ে ক্রমাগত চাপও বাড়াচ্ছিল বিরোধীরা। সবদিক বিবেচনা করেই এবার বাজেট কৃষক ও গ্রামের উপরই জোর দিয়ে নিজেদের বদনাম ঘোচাল সরকার।
[ কেন্দ্রীয় বাজেট ২০১৮: বিশ্বের বৃহত্তম জনস্বাস্থ্য যোজনায় মিলবে ৫ লক্ষ টাকা ]
কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হল?
কৃষকদের আয় বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বাজেটে। মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস বা এমএসপি-র হার বাড়ানো হয়েছে, উৎপাদন খরচের প্রায় দেড় গুণ। অর্থাৎ কৃষকদের থেকে যে উৎপাদিত শস্য সরকার কিনে নেয়, তার দাম বাড়ানো হচ্ছে। ফলে মুনাফার মুখ দেখবেন কৃষকরা। কৃষিজাত পণ্যের বিপণনের উপরও নজর দেওয়া হয়েছে। এবং তার উন্নতির জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ২০০০ কোটি টাকা। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে বরাদ্দ দ্বিগুণ করে করা হয়েছে ১৪০০ কোটি টাকা। কৃষাণ ক্রেডিট কার্ডের আওতাভুক্ত করা হবে জেলে ও পশুপালকদেরও। বাঁশ উৎপাদন ক্ষেত্রে বরাদ্দ করা হয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। মাছ চাষ ও পশুপালন ক্ষেত্রে এবার বরাদ্দ করা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। অন্তত ৪ কোটি গ্রামীণ মহিলাকে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। পাশাপাশি নীতি আয়োগের সঙ্গে পরিকল্পনা করে ২২,০০০ গ্রামীণ ‘এগ্রি মার্কেট সেন্টার’কে উন্নত করে তোলা হবে। যাতে কৃষকরা তাঁদের পণ্য নিয়ে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারেন। কৃষিকে জাগিয়ে তুলতে গড়ে তোলা হবে ৪২টি ফুড পার্ক। জলসেচ প্রকল্পের পরিকাঠামো উন্নতিতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২৬০০ কোটি টাকা। কৃষকরা যাতে সহজেই তাৎক্ষণিক ঋণ নিতে পারেন সেকারণে ১১ লক্ষ কোটি টাকার একটি ফান্ড তৈরি করছে সরকার। সব মিলিয়ে ঋণ থেকে পণ্য বিক্রয়, সব ক্ষেত্রেই কৃষকদের সহায়তার দিকে নজর দেওয়া হয়েছে।
[ কেন্দ্রীয় বাজেট ২০১৮: একধাক্কায় অনেকটাই বাড়ছে মোবাইলের দাম ]
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, কোটি কোটি লোকের আশা-ভরসাকে সহায়তা দেবে এই বাজেট। উন্নয়নেও গতি আনবে। পাশাপাশি তিনি জোর দেন দুটি বিষয়ে। এক, এই বাজেট ‘ফার্মার ফ্রেন্ডলি’। অর্থাৎ কৃষকদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি। এবং ‘কমন ম্যান ফ্রেন্ডলি’। সাধারণ নাগরিকদের সুবিধা অসুবিধাতেও নজর দেওা হয়েছে। ব্যবসার পাশপাশি, জনজীবনের মান উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলেই জানান প্রধানমন্ত্রী। কৃষকের পণ্য বিক্রয় থেকে মধ্যবিত্তের সঞ্চয়- এই বিস্তারিত ক্ষেত্রে এবার নজর। ফলে মোদি সরকার যে কৃষক বিরোধী নয়, বা সাধারণ আমআদমির সুখদুঃখের কথা ভাবে না, এবার সে অভিযোগ খারিজ হতেই চলেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.