সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তীব্র অশান্তি থামলেও শ্মশানের নীরবতা বেঙ্গালুরুতে৷ মঙ্গলবার শহরজুড়ে গত দু’দিনের মতো বিশৃঙ্খলা না থাকলেও আতঙ্কিত শহরবাসীকে পথে-ঘাটে বিশেষ দেখা যায়নি৷ ইদ উপলক্ষে সরকারি স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত বন্ধ থাকলেও বেসরকারি সংস্থাগুলি খোলাই রয়েছে৷ তা সত্বেও বেঙ্গালুরুর থমথমে পরিস্থিতি কাটেনি এখনও৷ এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে কর্নাটক ও তামিলনাড়ুর মানুষকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানান৷ পাশাপাশি কাবেরী নদীর জলবণ্টন ঘিরে দুই রাজ্যে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে দরিদ্র মানুষ এবং সরকারি সম্পত্তি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি জানান৷ তিনি আরও বলেন, জলবণ্টনকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার সমাধান আইনের মাধ্যমেই করতে হবে৷ আইন ভেঙে গোটা সমস্যার কোনও সুরাহা হবে না বলেও তিনি জানান৷
কাবেরী নদীর জলবণ্টন নিয়ে সোমবার সকাল থেকেই আগুন জ্বলছে দুই রাজ্যে৷ ঘটানো হয়েছে বিস্ফোরণ, চলেছে যথেচ্ছ ভাঙচুর৷ বিক্ষোভের আগুনে রাস্তা ও ডিপোতে পুড়ে ছাই হয়েছে ৬টি ট্রাক ও অন্তত ২০টি বাস। এমনকী দুই রাজ্যের বাসিন্দাদেরও পড়তে হয়েছে বিক্ষোভের মুখে৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়েই ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন৷ মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ শুরু হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়৷ কর্নাটকে সোমবার বিক্ষোভকারী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গুলি চালালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক জনের৷ আহত আরও এক জন৷
কাবেরীর জলবণ্টন সংক্রান্ত সাম্প্রতিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দৈনিক ১২,০০০ কিউসেক জল তামিলনাড়ুকে সরবরাহ করবে কর্নাটক৷ গত ৫ সেপ্টেম্বর কাবেরীর জলবণ্টন নিয়ে তারা যে রায় দিয়েছিল তা পুনর্বিবেচনার পরই এই নতুন রায়৷ আগের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, ৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে ১০ দিন দৈনিক ১৫,০০০ কিউসেক জল কর্নাটক সরবরাহ করবে তামিলনাড়ুকে৷
অনাবৃষ্টির দোহাই দিয়ে তখনই কর্নাটক বলেছিল রাজ্যে জলসংকটের যা পরিস্থিতি তাতে ওই জল তামিলনাড়ুকে দিতে হলে বিপদে পড়বে কর্নাটক৷ কিন্তু নতুন রায়ে কোনও সমাধান হয়নি৷ উল্টে আরও বেশি জল দিতে হবে কর্নাটককে৷ এই নিয়েই বিক্ষোভ৷
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রায় বদলের পরই তা ছড়িয়ে পড়ে দুই রাজ্যে৷ বিক্ষুব্ধ কর্নাটকবাসী আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে তামিলনাড়ু থেকে আসা পর্যটন সংস্থার ৪০টি বাসে৷ চালানো হয় ভাঙচুর৷ অন্যদিকে খাস চেন্নাইয়ে কর্নাটকের ব্যবসায়ী পরিচালিত একটি হোটেলে ঘটানো হয় পেট্রোলবোমা বিস্ফোরণ৷ বেঙ্গালুরুর কিছু স্থানে জারি করা হয় কারফিউ৷ কর্নাটকে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত ১৫ হাজার পুলিশকর্মী৷ নামানো হয় র্যাফ, জরুরি (কুইক রিঅ্যাকশন) বাহিনী, কর্নাটকের স্টেট রিজার্ভ পুলিশ, বেঙ্গালুরুর সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী, বিশেষ বাহিনী, সেণ্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স এবং ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ ফোর্স৷ এর সঙ্গে আরও ৩০০০ অতিরিক্ত হোমগার্ডকেও নামানো হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে৷ কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া ডেকেছেন মন্ত্রিসভার আপৎকালীন বৈঠক৷ একইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে জয়ললিতার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.