সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদের দাবি জানাচ্ছে ভারত। যত দিন যাচ্ছে এই দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। এবার ফের একবার রাষ্ট্রসংঘকে একহাত নিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। বিশ্বে উত্তেজনা কমানোর ক্ষমতা রয়েছে ভারতের। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে এমনই জানিয়েছেন তিনি। রবিবার এই অনুষ্ঠানেই পশ্চিম এশিয়ার সংঘাত সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাষ্ট্রসংঘকে ‘পুরনো কোম্পানির মতো’ বলে উল্লেখ করেন জয়শংকর।
এদিন, রাষ্ট্রসংঘ প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী বলেন, “রাষ্ট্রসংঘ পুরনো কোম্পানির মতো। যেটি সময়ের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্য রেখে চলে না। এটি সম্পূর্ণরূপে বহুপাক্ষিক, কিন্তু যখন এটি বড় ইস্যুতে পদক্ষেপ নেয় না, তখন দেশগুলো তাদের নিজস্ব উপায় খুঁজে নেয়। গত পাঁচ-দশ বছরে আমাদের সবার জীবনে সবচেয়ে বড় যে ঘটনা ঘটেছে তা হল কোভিড। কোভিড নিয়ে রাষ্ট্রসংঘ কী করেছে তা ভেবে দেখুন? আমি মনে করি, এর কোন উত্তর নেই। আজ বিশ্বে দুটি দ্বন্দ্ব চলছে এবং সে বিষয়েও এই সংস্থা শুধু দর্শকের ভূমিকায়। বিভিন্ন দেশের মধ্যে যোগাযোগ দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু রাষ্ট্রসংঘের ভূমিকা নিয়ে এখনও মানুষের মনে প্রশ্ন আছে।”
তিনি আরও বলেন, “ইউক্রেন সম্পর্কেও একই কথা বলা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গেও একবার দেখা করেছেন তিনি। আমরা এখনও যোগাযোগ রাখছি। আমরা এটা করছি কারণ আমরা একটি এমন শান্তিপ্রিয় দেশ, যার প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধের ঘোর বিরোধী। তিনি কিয়েভ ও মস্কোতে গিয়ে উভয় রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। এর বেশি আর কোনও দেশ কী করতে পারে!”
উল্লেখ্য, আধুনিক দুনিয়ায় সময়ের দাবি মেনে নিরাপত্তা পরিষদে সংস্কারের পক্ষে বারবার সওয়াল করে এসেছে নয়াদিল্লি। দীর্ঘদিন ধরেই পাঁচ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। ইতিমধ্যে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া নয়াদিল্লির দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু বাদ সেধেছে চিন। যা নিয়ে বহুবার বেজিংকে একহাত নিয়েছে নয়াদিল্লি।
সম্মেলনে জয়শংকরকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কিম জং উন না জর্জ সোরস, কার সঙ্গে ডিনারে যেতে পছন্দ করবেন? বিন্দুমাত্র সময় অপচয় না করে হাসতে হাসতে বিদেশমন্ত্রী জবাব দেন, “এখন নবরাত্রির সময়। আমার উপোস চলছে।” তাঁর এই বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে করতালিতে ফেটে পড়ে অনুষ্ঠানস্থল। ইতিমধ্যেই সেই মুহূর্তের ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। আমেরিকার কোটিপতি জর্জ সোরসকে সকলেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অন্যতম সমালোচক হিসেবে চেনেন। বিজেপি-র অভিযোগ, এই ব্যক্তি ভারতবিরোধী আন্দোলনে অর্থনৈতিক মদত দেন এবং মোদিকে গদিচ্যুত করার পরিকল্পনায় জড়িত।
অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রনেতা কিম জং উন স্বৈরাচারী শাসক হিসেবে পরিচত। ফলে এস জয়শংকরের বুদ্ধিদীপ্ত জবাবে ঘায়েল হয়েছেন কূটনীতিবিদরাও। তবে এই প্রথমবার নয়, বরাবরই কূটনৈতিক চালে বাজিমাত করার নজির গড়েছেন বিদেশমন্ত্রী। সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন সামিট (এসসিও) উপলক্ষে তাঁর পাকিস্তান সফরের কথা ঘোষণা হয়েছে। তার পর থেকেই নানা মহলে নানা জল্পনা চলছে। সে প্রসঙ্গেও হালকা চালে বিদেশমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, “আমি একজন ভদ্র, বিনয়ী এবং সুশীল নাগরিক। চিন্তা করবেন না, আমি সে ভাবেই ব্যবহার করব।” এখন জয়শংকরের পাক সফরের দিকেই নজর কূটনৈতিক মহলের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.