সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৬ মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে মহা বিকাশ আঘাড়ির বিরাট সাফল্যে আশার আলো দেখেছিল বিরোধী শিবির। তবে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানেই ভূপতিত হলেন বালাসাহেবপুত্র উদ্ধব ঠাকরে ও স্ট্রং ম্যান হিসেবে পরিচিত শরদ পওয়ার। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই দুই শীর্ষ নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখের। যদিও মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে মহাজুটির বিরাট জয়ের নেপথ্যে ষড়যন্ত্রের আঁশটে গন্ধ পাচ্ছে মহা বিকাশ আঘাড়ি।
শনিবার ফলপ্রকাশ মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের। এখনও পর্যন্ত ফলাফলের যা ট্রেন্ড তাতে মহারাষ্ট্রে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে বিজেপি, শিব সেনা (শিণ্ডে) ও এনসিপি (অজিতের) মহাজুটি। ২৮৮টি আসনের মধ্যে ২৩১টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তারা। যেখানে ম্যাজিক ফিগার ১৪৫। শুধুমাত্র বিজেপির দখলে ১৩২টি আসনে। অন্যদিকে, মহা বিকাশ আঘাড়ি জয়ী/এগিয়ে মাত্র ৪৭ আসনে। মাত্র ৬ মাস আগে লোকসভা নির্বাচনে বড় সাফল্য পেয়েছিলেন উদ্ধবরা। সেখানে বিধানসভায় এত খারাপ ফল উদ্ধবের কাছে স্বপ্নাতীত। এহেন অবস্থায় রাজনৈতিক মহলের দাবি, যে দুই ইস্যুতে বালাসাহেবের উত্থান মারাঠা রাজনীতিতে তা আপাতত হাইজ্যাক হয়ে গিয়েছে। ফলে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন ঠাকরেপুত্র। এই পরিস্থিতি থেকে মারাঠা রাজনীতির মূল স্রোতে ফিরে আসা তাঁর জন্য যথেষ্ট কঠিন।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, বালাসাহেবের হাত ধরে শিব সেনার উত্থান হয়েছিল দুটি বিষয়কে হাতিয়ার করে। প্রথমত, কট্টর হিন্দুত্ব ও দ্বিতীয়ত, মারাঠা অস্মিতা। বিধানসভার ফলাফলের পর এটা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে হিন্দুত্বের অস্ত্র বিজেপিকে উপহার দিয়ে দিয়েছেন উদ্ধব। একইসঙ্গে যে মারাঠা অস্মিতাকে হাতিয়ার করে এতদিন লড়াই করে গিয়েছে বালাসাহেবের শিব সেনা, সেটাও ছিনিয়ে নিয়েছে একনাথ শিণ্ডের নয়া শিব সেনা। ফলে নিজের রাজনৈতিক পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়েছেন উদ্ধব। স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, পুত্র নয়, বালাসাহেবের ‘তাজ’ এখন উঠেছে তাঁর যোগ্য ‘শিষ্য’ শিণ্ডের মাথায়। উদ্ধবের শিবসেনায় যে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পুরণ করা যথেষ্ট কঠিন।
অন্যদিকে, মারাঠা ‘স্ট্রং ম্যান’ হিসেবে পরিচিত শরদ পওয়ারের গুরুত্ব এক ধাক্কায় অনেকখানি কমে গেল মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের পর। কন্যা সুপ্রিয়া সুলের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে অনেকদিন আগেই রাজনীতি থেকে সরে যেতে চেয়েছিলেন অশীতিপর শরদ। সেই মুহূর্তেই ভাঙন ধরেছিল এনসিপিতে। ভোটের ফলের পর শরদের রাজনৈতিক সন্ন্যাসের পথ আরও ত্বরান্বিত হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে সুপ্রিয়া দিল্লির রাজনীতিতে পরিচিত মুখ হলেও মহারাষ্ট্রে নন। ফলে শরদকে ছাপিয়ে অজিত ও এনসিপি সমার্থক শব্দ হয়ে উঠল।
যদিও ফড়ণবিস-শিণ্ডেদের জয়ের পিছনে কারচুপি থাকতে পারে বলে এদিন সন্দেহ প্রকাশ করেছে মহা বিকাশ আঘাড়ি। হারের প্রসঙ্গে সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘‘এই ফলাফলকে আমরা জনতার রায় বলে মানি না। কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। এ রাজ্যের মানুষ তো অসৎ নয়। এই ফল কী করে সম্ভব? বিজেপির লাডলা ভাই গৌতম আদানি। ওঁর সাহায্যেই ওরা জিতেছে। বড় যড়যন্ত্র হয়েছে।’’ অন্যদিকে উদ্ধব ঠাকরে বলেন, কিছু মানুষ ওদের জয়কে ইভিএমের জয় বলে দাবি করছেন। সেটা হতেই পারে। তবে আমরা মহারাষ্ট্রের সম্মানের লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে যাব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.