সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কেন?
এই ছোট্ট প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সারা দেশে। ঘুরপাক খাচ্ছে নেতাদের মস্তিষ্কে, ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মাথায়। টুইটারে উঠছে ঝড়! সবারই এক প্রশ্ন- হঠাৎ কেন ৫ কোটির দামে দেশপ্রেম বিক্রির দালালি করতে নামলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস?
সম্প্রতি মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা কথা দিয়েছে, তারা করণ জোহরের নতুন ছবি ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’-এর প্রদর্শনে কোনও রকম বাধা দেবে না। সেই কথাবার্তা পাকা করার জন্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসের সঙ্গে রাজ ঠাকরের উপস্থিতিতে দেখা করেন ছবিটির পরিচালক করণ জোহর। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন প্রোডিউসারস্ গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুকেশ ভাটও। বৈঠকে ঠিক হয়, মুচলেকা দেবেন করণ জোহর। ছবি শুরুর আগে তিনি একটি ভিডিও স্টেটমেন্টে পরোক্ষে বলবেন, ছবিতে পাকিস্তানি তারকাকে দিয়ে অভিনয় করানোটা খুব অন্যায় কাজ হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। পাশাপাশি রাজ ঠাকরে দাবি তোলেন যে সব পরিচালক-প্রযোজকরা পাক-শিল্পীদের দিয়ে কাজ করিয়েছেন, তাঁদের ৫ কোটি করে টাকা জরিমানা দেওয়া বাধ্যতামূলক! ওই টাকা ব্যয় করা হবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর খাতে। সেই শর্তেও উপায় না দেখে রাজি হয়ে যান করণ জোহর।
সেই খবর আসার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। সবারই এক বক্তব্য- শেষে কি না টাকার বিনিময়ে দেশপ্রেম বিক্রির দালালি করতে নামলেন ফড়নবিস! এর কি খুব দরকার ছিল? তাছাড়া ভারত সরকারের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ তো স্পষ্ট বলেই দিয়েছেন, এদেশে পাক-শিল্পীদের কাজ করায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই! তাহলে এমন আইন-বহির্ভূত কাজ কেন করতে গেলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী?
What a sorry state of affairs!CM brokers deal n buys patriotism for 5 crores!After Home minister had promised peaceful passage 4 #ADHM
— Azmi Shabana (@AzmiShabana) 23 October 2016
SanghParivar spks in diff voices most blatant expression is CM MHRSTA brokering deal withMNS instead of enforcing law n order4 ADHM release
— Azmi Shabana (@AzmiShabana) 23 October 2016
How ‘innocent ‘you are! Dont you see Sangh Parivars old strategy in place here? https://t.co/T5M3FNM6Ki
— Azmi Shabana (@AzmiShabana) 23 October 2016
MNS will decide whether Im patriotic or not?I bow to d Indian Constitution Raj Thackeray does not.Whos patriotism needs questioning?
— Azmi Shabana (@AzmiShabana) 23 October 2016
CM Fadnavis shows scant respect for Home Ministers assurance of safe passage for #ADHM. BJP better haul him up and demand explanation
— Azmi Shabana (@AzmiShabana) 23 October 2016
ঠিক এই এক প্রশ্ন টুইটারে তুলে ধরেছেন শাবানা আজমি। পর পর পাঁচটি টুইটে ফড়নবিসকে তুলোধোনা করেছেন তিনি। সাফ বক্তব্য শাবানার, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কথা দিয়েছে অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল-এর প্রদর্শনে কোনও বাধা আসবে না। তার পরেও কেন টাকা খেয়ে দেশপ্রেমের দালালি করছেন ফড়নবিস? এটা তো তাঁরই দেখা উচিত যে তাঁর রাজ্যে ছবিটির প্রদর্শন শান্তিপূর্ণ হয়। তা না করে তিনি টাকা দিতে বাধ্য করছেন ছবির পরিচালককে? সরকারের অবিলম্বে ওঁকে শো-কজ করা উচিত!” টুইটে রাজ ঠাকরেকেও ধিক্কার জানাতে ভোলেননি শাবানা। লিখেছেন, “কে রাজ ঠাকরে? ওর এত দেশপ্রেম নিয়ে মাথাব্যথাই বা কীসের? আমরা যাঁরা সংসদে জাতীয় সংহতি রক্ষার জন্য সংবিধানের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তাঁদের তো কোনও অসুবিধা হচ্ছে না ভারতে পাক-শিল্পীদের কাজ করা নিয়ে! ওর তাহলে এত গা-জোয়ারি কেন?”
শুধু শাবানাই নন! একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে কংগ্রেস মুখপাত্র শচীন সাওয়ান্তের কণ্ঠে। “মুখ্যমন্ত্রীর কাজ রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা! তা না করে তিনি কী করছেন? না, একটা দলের কাছে আইন-কানুনের মাথা নত করার সব ব্যবস্থা করছেন”, বলেছেন সাওয়ান্ত! “মাই নেম ইজ খান-এর মুক্তির সময়েও এক ঝামেলা করেছিল শিব সেনা। তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন অশোক চহ্বান। তিনি কিন্তু টাকার দালালি করেননি। বরং, ছবিটির প্রদর্শন যাতে শান্তিপূর্ণ হয়, তার জন্য প্রেক্ষাগৃহের বাইরে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করেছিলেন”, স্মৃতি হাতড়ে অতীত উদ্ধার করলেন সাওয়ান্ত। অন্য দিকে ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির মুখপাত্র নবাব মালিকের বক্তব্য, ওই টাকা নিলে ভারতীয় সেনাবাহিনী শুধু কলঙ্কিতই হবে না, পাশাপাশি শহিদদের ভাবমূর্তিও কলুষিত হবে!
তবে, এই সব ধিক্কারকে ছাপিয়ে ভাইরাল হয়েছে মুম্বইয়ের হার্দিক রাজগোরের একটি টুইট। সেই পোস্ট বলছে, দুই স্কুল ছাত্রের কথা। একজন হেনস্তার শিকার হয়, অন্যজন হেনস্তা করে। তো, একদিন হেডমাস্টারের উপস্থিতিতে হেনস্তার শিকার ছাত্রটির বাড়ির লোক স্কুল ফান্ডে মোটা টাকা ডোনেশন দিল। এবং, হেনস্তা যে করছে, সেই ছাত্রের বাড়ির তরফে দেওয়া হল প্রতিশ্রুতি- আর এরকম ঘটনা ঘটবে না। টুইটটি পড়ে দেখুন, ভাল লাগবে। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে আরও এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন- ওই টাকার কত শতাংশ যাবে ফড়নবিসের পকেটে?
অবশ্য এত সমালোচনার শিকার হয়েও বিন্দুমাত্র লজ্জিত নন ফড়নবিস! তাঁর বক্তব্য, করণ জোহর এবং অন্যরা স্বেচ্ছায় টাকা দিতে রাজি হয়েছেন! এটা রাজ ঠাকরে আর ওঁদের পারস্পরিক ব্যাপার! তিনি যাতে রাজ্যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, স্রেফ সেই উদ্যোগটুকু নিয়েছেন! সেটাও যে দালালি, এটা তাঁর মাথাতেই ঢুকছে না!
আর, করণ জোহর? তাঁর এ ব্যাপারে বক্তব্য কী?
Here is @karanjohar‘s namesake sending him ticket money but refusing to see movie. Fair as he only appealed abt loss of money & not abt art pic.twitter.com/ZnwoA08mPV
— shilpi tewari (@shilpitewari) 20 October 2016
ছবিটির প্রদর্শন পাছে ফের আটকে যায়, সেই ভয়ে ঘটনাটি নিয়ে আর কিছুই বলতে চাইছেন না তিনি। তবে জনতার সমর্থন যে রয়েছে তাঁর পক্ষেই, একটি ঘটনা তা প্রমাণ করে দিয়েছে। সম্প্রতি জনৈক ব্যক্তি একটি চেক পাঠিয়েছেন করণ জোহরকে। মাত্র ৩২০ টাকার! অর্থাৎ সেটা একটা শোয়ের একটা টিকিটের দাম! এভাবেই সেই ব্যক্তি করণ জোহরের আর্থিক লোকসানের অংশীদার হতে চাইছেন। তেমনই ভারতীয় সেনাবাহিনী এই মধ্যস্থতার তীব্র সমালোচনা করে জানিয়েছে, ওই টাকা তারা গ্রহণ করবে না!
সব মিলিয়ে, ছবির মুশকিল না হয় আসান হল! মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী আপাতত মুশকিলটা কী ভাবে সামলান, সেটাই দেখার!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.