প্রণব সরকার, আগরতলা: ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের দু’দিন আগে ভোট রাজনীতি থেকে অবসরের কথা ঘোষণা করলেন ত্রিপুরার রাজপরিবারের সদস্য তথা তিপ্রা মথার প্রধান প্রদ্যোত বিক্রম মাণিক্য দেববর্মা (Pradyot Manikya Debbarma)। সেই সাথে চলতি বছরে বিয়ে করার কথাও ঘোষণা করেছেন ত্রিপুরার রাজা।
Done my duty ! I hope people will realise all this effort was for them and not for my own interest ! This was a tough fight and I hope I have fought a good fight even though I felt alone at times
— Pradyot_Tripura (@PradyotManikya) February 14, 2023
তিনি নিজে ভোটে লড়েননি। দলের প্রথম সারির নেতাদেরও মনোনয়ন দেননি। এডিসি নির্বাচনে (ADC Election) জিতেছিলেন ঠিকই কিন্তু নিজের হাতে ব্যাটন থাকা সত্বেও দায়িত্ব নে নি। এবার উপজাতি সংরক্ষিত ২০টি আসনের বাইরে তপশিলী জাতি সংরক্ষিত এবং সাধারণ আসন মিলিয়ে ৪২টিতে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন প্রদ্যোৎ মাণিক্য দেববর্মা, ভিপ্রা মথার (Tipra Motha) চেয়ারম্যান। হেলিকপ্টার নিয়ে রাজ্যের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে প্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের দাবিতে প্রচার করে গিয়েছেন। তাঁর দাবি, একার শক্তিতে সরকার গড়বে তিপ্রা মথা।
— Pradyot_Tripura (@PradyotManikya) February 14, 2023
এ হেন প্রদ্যোৎ মাণিক্য শেষবেলায় এসে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই ঘোষণা করে দিলেন তার রাজনৈতিক সন্ন্যাস। বললেন, এটাই তার রাজনৈতিক শেষ সভা। এরপর আর কোন রাজনৈতিক মঞ্চে তিনি ভাষণ দেবেন। নিজের জাতির জন্য একটা শেষ লড়াইয়ে তিনি নেমেছেন। সে লড়াই শেষ। এবার তিনি ভোট রাজনীতির বাইরে চলে যাবেন। উল্লেখ্য, দুদিন আগেই আগরতলায় একটি আলাপচারিতা অনুষ্ঠানে প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মন জানিয়েছিলেন এবার তিনি বিয়ে করে সংসারী হবেন। কারণ এবার তাঁর জীবনসঙ্গী দরকার। খাঁ খাঁ করছে উড্ডয়ন্ত রাজপ্রাসাদ। শিলংয়ে ত্রিপুরা ক্যাসেল। কলকাতার বালিগঞ্জে পড়ে রয়েছে প্রাসাদ।
বুবাগ্রার বক্তব্য শুনে তিপ্রা মথার হয়ে যারা লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন তাদের মাথায় হাত। তাহলে কার জন্যে লড়ছেন তাঁরা? তাঁদের নেতাই বা কে? কেনই বা তাঁরা শাসকশক্তির বিরুদ্ধে এমন দুর্লঙ্ঘ যাত্রার সঙ্গী হলেন? পৃথক রাজ্য তিপ্রাল্যান্ডেরই বা কি হবে? তিপ্রা মথার কর্মী মাত্রেই জানেন তাদের দল এককভাবে কখনোই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এমন কি উপজাতি সংরক্ষিত ২০টি আসনও তাদের পাবার কথা নয়। কারণ উপজাতি সংরক্ষিত আসনগুলোর বেশ কয়েকটির মধ্যেই সিংহভাগ বাঙালি অংশের ভোটার, এরা কোনভাবেই পৃথক তিপ্রাল্যান্ডের (Tipraland) দাবিদার তিপ্রা মোথাকে সমর্থন করবেন না। শুধুমাত্র উপজাতি ভোট দিয়ে সব সংরক্ষিত আসনে জয় পাওয়া সম্ভব নয়। ফলে ২০টি উপজাতি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে উপজাতিদের সর্বাধিক সমর্থন থাকলেও ১০-১২টি আসনের বেশি জয় সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে প্রদ্যোত কিশোর-হীন ভিপ্রা মথার কর্মী সমর্থকরা যেন অথৈ সাগরে গিয়ে পড়লেন। পাহাড়ে তিপ্রাল্যান্ডের প্রতিশ্রুতিরই বা কি হবে? প্রচারের শেষদিন কোন কৌশলে প্রদ্যোত কিশোর রাজনীতি ছাড়ার বার্তা দিলেন? সে প্রশ্ন এখন মথার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও। ভোটের আগে বুবাগ্রা বিরহে সমর্থকরা এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। প্রদ্যোত অবশ্য মুখে বলছেন, যতদিন না পৃথক তিপ্রাল্যান্ডের দাবি পূরণ হচ্ছে, ততদিন তিনি অভিভাবক হিসাবে থাকবেন দলের সঙ্গে।
তাবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তার এই বক্তব্য কতটুকু আন্তরিক তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কারণ এর আগেও প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মা বহু কথা বলেছেন, যা আর রক্ষিত হয়নি। আবেগের বশে অথবা সুপরিকল্পিতভাবেই এমন সব বক্তব্য রেখেছিলেন তিনি। এবারও সেই আবেগ নাকি সুপরিকল্পিত বক্তব্য তা নিয়েও বাড়ছে জল্পনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.