সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আরেকটা কঠিন লড়াই। আবার একটা জয়। ফের জয়ীর নাম আতিয়া সাবরি। তাৎক্ষণিক তিন তালাক মামলায় যে ছ’জন আরজি জানিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টে তার অন্যতম ছিলেন আতিয়া সাবরি। সেই মামলার রায় কী হয়েছিল তা এখন নতুন কোনও বিষয় নয়। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের এই মহিলার সাম্প্রতিকতম জয়নিশানটি যেখানে গাঁথা হল, সেখানে বিবাহবিচ্ছিন্ন আতিয়া আদায় করলেন খোরপোশও। উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরের পারিবারিক আদালত নির্দেশ দিয়েছে, দুই কন্যার ভরনপোষণের জন্য তাঁকে প্রতি মাসে খোরপোশ বাবদ ২১ হাজার টাকা দিতে হবে তাঁর প্রাক্তন স্বামীকে।
প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে আতিয়ার পাঁচ বছর ধরে চলছিল ভরপোষণের মামলাটি। তারই মধ্যে ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে সুপ্রিম নির্দেশে ১৪০০ বছরের প্রাচীন এক ব্যবস্থা রদ হয়। ভারতে বাতিল হয় তাৎক্ষণিক তিন তালাক (Triple Talaq)। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ-সহ ২২টি দেশেও যা বাতিল হয়েছে। তার পর ফের একটি লড়াই জিতলেন তিনি।
২০১২ সালে বিয়ের পর শুরু থেকেই নানা টালমাটালের মধ্য দিয়ে চলা আতিয়ার বিবাহিত জীবন শেষ হয়ে যায় ২০১৫ সালে। ওই বছরই তাঁর দ্বিতীয় কন্যার জন্মের পরই তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে দেন তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। আতিয়া জানিয়েছে, তাঁর কাছে পণ বাবদ ২০ লক্ষ টাকাও দাবি করেছিলেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এর কিছুদিন পরেই ২ নভেম্বর তাঁর প্রাক্তন স্বামী ওয়াজিদ আলি একটি কাগজে তিনবার ‘তালাক’ শব্দটি লিখে পাঠিয়ে দেন। এর ২০দিন পরেই বিবাহবিচ্ছেদ দেওয়ার এই তাৎক্ষণিক তিন তালাকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন আতিয়া। শুরু থেকেই তাঁর কন্যা সন্তানের জন্ম নিয়ে পরিবারের মধ্যে কোনঠাসা হয়ে পড়েন তিনি। পরের সন্তানও কন্যা হওয়ায় পরিস্থিতি তাঁর জন্য আরও জটিল হয়ে দাঁড়ায়। যা শেষ হয় আদালতে। একদিকে যেমন তালাক পদ্ধতির বিরুদ্ধে লড়াই অন্যদিকে নিজের দুই কন্যার ভরনপোষণের জন্য মামলা চালিয়ে যাওয়া। এদিন আদালত নির্দেশ দিয়েছে, প্রতি মাসে ২১ হাজার টাকাই শুধু নয়, এই ছ’বছর সময়ের জন্য ‘এরিয়ার’ অর্থাৎ গোটা সময়ের জন্য বকেয়া অর্থ বাবদ ১৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দিতে হবে ওয়াজিরকে।
তাঁর কাছে এটা ছিল ‘সম্মানের জন্য লড়াই’। তাই মামলায় জয়টাও ছিল ‘মর্যাদার জয়’। এমনই জানিয়েছেন আতিয়া। অন্য মহিলাদেরও এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়ে লড়াইয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। আদালতে দাঁড়িয়ে আতিয়া বলেছিলেন, “বিয়ে যখন দু’জন মানুষের মধ্যে দু’জনের সম্মতিতে একটা চুক্তি, তাহলে শুধুমাত্র একা পুরুষটির কেন সেই অধিকার থাকবে তা ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার? কেন একজন মহিলার এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার অধিকার থাকবে না। তাঁরও সেটা থাকা উচিত।” সেই অধিকারেই তাঁর দাবিতে সায় দিয়েছে পারিবারিক আদালত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.