সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: শিলচর, লখনউয়ের পর এবার দিল্লি। ফের ভিন রাজ্যে পুলিশের বাধার মুখে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। রবিবার JNU-তে তাণ্ডবের ঘটনায় ছাত্র সংসদের সভানেত্রী, অধ্যাপিকা-সহ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বেশ কয়েকজন জখম হওয়ার পর তাঁদের পাশে দাঁড়াতে আজ দিল্লি গিয়েছেন দীনেশ ত্রিবেদী, সাজদা আহমেদ, মানস ভুঁইঞা, বিবেক গুপ্তা। কিন্তু সেখানেও তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশদ্বার থেকে প্রায় ১৫০ মিটার দূরে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। বাধ্য হয়ে রাস্তার উপরেই তাঁরা ধরনায় বসেন।
অসমে এনআরসি‘র প্রতিবাদ জানিয়ে, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া সেখানকার দিশাহীন মানুষজনের পাশে দাঁড়াতে শিলচরে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটা ছিল ২০১৮। কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মমতাবালা ঠাকুর, মহুয়া মৈত্র এবং সুখেন্দুশেখর রায় শিলচর বিমানবন্দরে নামার পরই আইনশৃঙ্খলা অবনতির যুক্তি দেখিয়ে সেখানেই আটকে দেওয়া হয়। সেখানে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের বাকবিতণ্ডা হয়। এমনকী নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে মহুয়া মৈত্রর বারবার বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টার ছবি রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখানেই তিনি বুঝিয়েছিলেন নিজের সাহস আর দক্ষতা। গত বছর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে উত্তরপ্রদেশে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ২৬ জনের। প্রতিবাদের শুরুতেই লখনউয়ে মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৬ জনের। প্রিয়জন হারানো সেই অসহায় পরিবারগুলোর প্রতি দরদী হয়ে সেখানেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গিয়ে আটকে পড়েছিলেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।
এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। এদিন দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ দিল্লিতে পৌঁছান তৃণমূলের চার প্রতিনিধি। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছন তাঁরা। দেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে রাস্তার দু’ধারে অন্তত ১৫০ মিটার পর্যন্ত ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা। সেই ব্যারিকেডের বাইরে গাড়ি থামিয়ে তাঁরা এগিয়ে যেতে চান। সেখানে মোতায়েন করা পুলিশকর্মীরা পরিচয়পত্র দেখতে চান। প্রত্যেক সাংসদ নিজেদের পরিচয়পত্র দেখান। সেসব পরীক্ষা করে তাঁদের প্রাথমিকভাবে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর দীনেশ ত্রিবেদী, সাজদা আহমেদ, বিবেক গুপ্তা এবং মানস ভুঁইঞা এগোতে গেলে, মিনিট খানেকের মধ্যেই তাঁদের ফের আটকে দেওয়া হয়। নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, তাঁরা যেতে পারবেন না।
কেন তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে, এই প্রশ্ন করলে নিরাপত্তারক্ষীরা কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বলে অভিযোগ। বারবার তাঁদের বোঝানো হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আক্রান্ত পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে চান তাঁর। কিন্তু কিছুতেই এগোতে দেওয়া হয় না। এরপর তৃণমূল প্রতিনিধিদল এই যুক্তিও দেখান যে জেএনইউ ক্যাম্পাসের ভিতরে গিয়েছেন সিপিএম, কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। তাহলে তাঁরাই বা কেন যেতে পারবেন না? এ নিয়ে কিছুক্ষণ পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয় দীনেশ ত্রিবেদী, মানস ভুঁইঞাদের। সুরাহা না হওয়ায় তাঁরা রাস্তার উপরেই ধরনায় বসেন। খবর পেয়ে সেখানে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে যান দলের রাজ্যসভার সাংসদ ডক্টর শান্তনু সেন। তিনিও যোগ দেন ধরনায়।
দীনেশ ত্রিবেদী শ্লেষ করে বলেন, ”ওখানে যারা মাস্ক পরে আসে, তাদের বিনা বাধায় ঢুকতে দেওয়া হয়। আমরা মাস্ক পরে এলে হয়ত আমদেরও ঢুকতে দিত।” তিনি এও বলেন, ”রবিবারের ঘটনা জ্ঞানের মন্দিরের উপর সন্ত্রাসী হামলা।” সাংসদ মানস ভুঁইঞার দাবি, ”এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে আতঙ্ক কাজ করে ওদের মধ্যে। আমরা মমতার প্রতিনিধি বলে বাধা দেওয়া হচ্ছে।” জেএনইউ-তে গিয়ে সরাসরি আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে না পারলেও, রাস্তায় ধরনায় বসেই নিজেদের প্রতিবাদ তাঁদের কাছে পৌঁছে দিতে চায় তৃণমূল প্রতিনিধিদল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.