সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অঙ্গ দানের নয়া নজির মুম্বইয়ে। লোকাল ট্রেনে করে প্রতিস্থাপনযোগ্য লিভার পৌঁছে গেল ৩১ কিলোমিটার দূরের হাসপাতালে। একেবারে মসৃণ গতিতে, কোনও জটিলতা ছাড়াই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগীর মস্তিষ্কের মৃত্যু ঘটেছে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। আর তারপরই থানের জুপিটার হাসপাতালের সেই ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া রোগীর শেষ ইচ্ছাকে সম্মান দিয়ে তাঁর যকৃৎটি দান করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যাঁর দেহে সেই লিভার প্রতিস্থাপিত হবে, সেই মানুষটি তো ভর্তি রয়েছেন ৩১ কিলোমিটার দূরে দাদারের এক হাসপাতালে। দ্রুত সেখানে পৌঁছতে না পারলে উদ্যোগটাই বৃথা। অথচ ২৪X৭ ব্যস্ত বাণিজ্যনগরীর ট্রাফিকের যা নিদারুণ হাল, তাতে কোনওভাবেই সময়মতো দাদার পৌঁছনো সম্ভব নয়।
অগত্যা উপায়? মুম্বইয়ের ‘লাইফলাইন’ আছে তো! হ্যাঁ, বাণিজ্যনগরীর ‘জীবনরেখা’ নামে পরিচিত, শহরতলির সেই লোকাল ট্রেনে (দুপুর ৩.০৮ মিনিটের করজাট-সিএসটি লোকাল) চেপেই থানে থেকে দাদার পাড়ি দিল উলহাসনগরের সেই ‘ব্রেন ডেড’ রোগীর লিভার। লাল রঙের ‘আইস বক্সে’ রাখা সেই যকৃৎ ৩১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করল মাত্র ৩৮ মিনিটে। তারপর আরও ২০ মিনিট সময় লাগল তাকে ‘গ্রিন করিডর’এর মাধ্যমে তার প্রকৃত গন্তব্য অর্থাৎ পারেলের গ্লোবাল হসপিটালে পৌঁছে দিতে। মরণাপন্ন অন্য যে রোগীর প্রাণ বাঁচাতে এই বড় ঝুঁকি নেওয়া হয়েছিল, দিনশেষে তা সফল হওয়ায় খুশির ঝলক প্রত্যেকের চোখেমুখে।
[ ভুয়ো ছবি বা খবর পোস্ট করবেন না, পুলওয়ামা নিয়ে সর্তকবার্তা সিআরপিএফের]
লোকাল ট্রেনে মানব অঙ্গের ‘ফেরি’। হ্যাঁ, এমন ঘটনা এই প্রথম। শুক্রবারের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে রবিবার। বুধবার এক বাইক দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হন উলহাসনগরের বাসিন্দা, ৫৩ বছরের এক সমাজকর্মী। শুক্রবার তাঁর মস্তিষ্কের মৃত্যু হলে পরিবারের সম্মতিতে তাঁর যকৃৎ অন্য কারও দেহে প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাসপাতালের বিবৃতি অনুযায়ী, ইস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে দাদার গেলে অনেক দেরি হয়ে যেত। তাই বেছে নেওয়া হয় লোকাল ট্রেনকে। কারণ শহরতলির এই রেল-রুট শুধু দ্রুততমই নয়, বিশ্বস্তও বটে। তাছাড়া চিকিৎসাশাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী, অস্ত্রোপচার করে মানবদেহ থেকে বের করে আনা যকৃৎ সর্বাধিক ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। সে কথা মাথায় রেখেই ট্রেনে দাদার পৌঁছনোর পর যকৃৎটি সংগ্রহ করে অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে যথাস্থানে পাঠিয়ে দিতে মুহূর্তখানেকও দেরি করেননি পুলিশ এবং রেল আধিকারিকরা। মুম্বইয়ের এই ঘটনা ফের স্পষ্ট করে দিল, ইচ্ছে সাধু হলে, উপায় ঠিক বেরোবেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.