ফাইল ছবি
শুভজিত মণ্ডল: ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানের জয় নিয়ে কংগ্রেস কর্মীরা স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত। এই জয় যেন কংগ্রেস শিবিরে ধু ধু মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো। মরুরাজ্যে শচীন পাইলট ব্যাটিং করেছেন তেণ্ডুলকরের মতোই, আবার ছত্তিশগড়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু এই দুই রাজ্যে ভাল ফল হওয়া সত্ত্বেও কিছু অস্বস্তির খবরও আছে কংগ্রেসের। দেখে নেওয়া যাক বড় জয়ের পরেও কী কী চিন্তায় রাখবে কংগ্রেসকে।
১. মধ্যপ্রদেশে টানাপোড়েন: ১৫ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, রাফালে দুর্নীতি, রাম মন্দির নির্মাণ করতে না পারা। একের পর এক হাতেগরম অস্ত্র ছিল কংগ্রেসের হাতে। কিন্তু তা সত্বেও মধ্যপ্রদেশে আশানূরূপ ব্যবধানে জিততে পারলেন না জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, কমল নাথরা। কিন্তু কেন? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, মানুষ বিজেপির বিকল্প চাইছে। কিন্তু মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস এখনও নিজেদের বিজেপির অবশ্যম্ভাবী বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে পারেনি।
২. নরম হিন্দুত্বের ব্যর্থতা! মধ্যপ্রদেশে নিজেদের বিজেপির থেকেও বেশি বড় হিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল কংগ্রেস। ইস্তেহারে রামপথ, গোশালার মতো প্রতিশ্রুতিও দেওয়া ছিল। কিন্তু সেসব সত্ত্বেও জয়ের ব্যবধান অতি সামান্য। শুধু মধ্যপ্রদেশ কেন, রাজস্থানেও প্রত্যাশিত ব্যবধানে জিততে পারেনি কংগ্রেস। অনেক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাহুল গান্ধীকে হয়তো নরম হিন্দুত্বের কার্ড খেলার আগে আরেকবার ভাবতে হবে।
৩. অন্তর্দ্বন্দ্বে জেরবার: রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে জিতলেও জয়ের ব্যবধান আশানূরূপ হয়নি তা হয়তো অন্ধ কংগ্রেস সমর্থকরাও স্বীকার করবেন। এর অন্যতম কারণ অবশ্যই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। মধ্যপ্রদেশে আপাত ঐক্যের ছবি দেখা গেলেও বাস্তবে কমল নাথ, দিগ্বিজয় সিং এবং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ারা ‘সাথ সাথ’-না থাকার ফলেই জয়ের ব্যবধান কমেছে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই অবস্থা রাজস্থানেও। কারা মুখ্যমন্ত্রী হবেন তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।
৪. মহাজোটের ব্যর্থতা: তেলেঙ্গানার নির্বাচন ছিল আলাদা তাৎপর্যের। কারণ, দক্ষিণের এই রাজ্যে বিজেপি খুব একটা শক্তিশালী ছিল না। মূল লড়াই ছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন মহাজোট এবং আঞ্চলিক হেভিওয়েট টিআরএসের মধ্যে। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে টিডিপি-কংগ্রেসের জোট কার্যত ধরাশায়ী হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন মহাজোটই সাফল্যের চাবিকাঠি নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে এই ফলাফলে। জোট গড়তে হলেও তা গড়তে হবে নৈতিকতার উপরে দাঁড়িয়ে।
৫. কংগ্রেস মুক্ত উত্তর-পূর্ব: একসময় উত্তর-পূর্ব ভারত কংগ্রেসের শক্তি ঘাঁটি ছিল। কিন্তু ছবিটা বদলাতে শুরু করে ২০১৪ লোকসভায়। একের পর এক রাজ্য ‘হাত’ছাড়া হওয়া শুরু করে কংগ্রেসের। মিজোরামই ছিল উত্তর-পূর্বের শেষ কংগ্রেস শাসিত রাজ্য। সেখান থেকেও কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেল দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল। স্বাভাবিকভাবেই উত্তর-পূর্বের এই ফল চিন্তায় রাখবে রাহুলকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.