নন্দিতা রায় ও টিটুন মল্লিক: অস্ত্র মামলায় আপ্ত সহায়ক গ্রেপ্তার হতেই গেরুয়া শিবিরে পা দিয়ে ফেললেন বিষ্ণুপুরের তৃণমূল সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। সংসদের অধিবেশন চলায় দিল্লিতেই রয়েছেন সৌমিত্র। রাজধানীর রাজনীতিতে গুঞ্জন, সেই সুযোগেই তিনি অমিত শাহ-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ঘনঘন যোগাযোগ করে নিজের রাস্তা প্রশস্ত করছিলেন। বুধবার তাঁর আপ্ত সহায়ক গ্রেপ্তারের পরই পুলিশের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে বিজেপিতে যোগদানের খবর নিশ্চিত করলেন। এদিন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা, রাজ্য বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের উপস্থিতিতে বিজেপিতে যোগ দেন সৌমিত্র। সূত্রের খবর, সৌমিত্র খাঁ-র পাশাপাশি আরও ৬ জন সাংসদকে খোয়াতে পারে ঘাসফুল শিবির।
দলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকদিন ধরেই ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছিলেন সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে। গত মাসেই দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ-র নাম না করে তিনি কটাক্ষ করেছিলেন – ‘রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য তৈলমর্দনই শ্রেষ্ঠ উপায়।` বিতর্ক শুরু হচ্ছিল তখন থেকেই। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভিযোগ, বিষ্ণুপুর এলাকায় নিজের একটা আলাদা চক্র তৈরি করে ফেলেছিলেন সৌমিত্র খাঁ। প্রকাশ্যেই দলবিরোধী একগুচ্ছ পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকি ভিডিও পোস্টে সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ নিয়েও শোরগোল পড়ে। সাংসদ সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন, বিষ্ণুপুরের এসডিপিও সুকোমলকান্তি দাস তাঁকে খুনের চক্রান্ত করছেন। এসব কাজের জন্য দলের সুপ্রিমোর কাছে নম্বর ক্রমশই কমছিল। এমনকি আগামী লোকসভায় নিজের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রতীকে লড়াইটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ছিল।
[বনধের দ্বিতীয় দিনে বিভিন্ন জায়গায় রেল অবরোধ, ফের স্কুলবাসে হামলা]
এর মাঝেই অস্ত্র-সহ সৌমিত্র খাঁ-র আপ্ত সহায়কের গ্রেপ্তারি। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ আচমকাই নিখোঁজ হয়ে যান সাংসদের আপ্ত সহায়ক সুশান্ত দাঁ। খবর পেয়ে দিল্লি থেকে তখনই একটি ফেসবুক লাইভ করেন সৌমিত্র। তাতে সরাসরি আপ্ত সহায়ককে অপহরণের অভিযোগ তোলেন বিষ্ণুপুরের এসডিপিও সুকোমলকান্তি দাসের বিরুদ্ধে। হুমকি দেন, ১২ঘণ্টার মধ্যে তাঁর আপ্ত সহায়ককে পুলিশ খুঁজে বের করতে না পারলে বিষ্ণুপুর থানা ঘেরাও করবেন। কিন্তু বুধবার সকালেই সোনামুখী বাইপাস থেকে গ্রেপ্তার হন সুশান্ত দাঁ। জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও জানিয়েছেন, ‘গ্রেপ্তার করার সময় সুশান্তর কাছে বেআইনি অস্ত্র মিলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।` এসবের পর আর ঝুঁকি নেননি সাংসদ। দিল্লিতে থাকাকালীনই গেরুয়া শিবিরে যোগ দিলেন তিনি। সৌমিত্র খাঁ-র দলত্যাগ নিয়ে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ওঁর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই দলের কোনও সম্পর্ক ছিল না। মানুষের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না। কাজ ঠিকমতো করছিল না। ও জানতো ওকে দল আর লোকসভায় টিকিট দেবে না। তাই আমরা ওঁর মতিগতি দেখে আজ সকালেই ওকে দল থেকে বহিস্কার করেছি।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.