Advertisement
Advertisement

অসমে গ্রেপ্তার তৃণমূল প্রতিনিধিরা, মুখ্যমন্ত্রীর নামে দায়ের এফআইআর

খাবার-জল পর্যন্ত মেলেনি, অভিযোগ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের৷

TMC leaders arrested in Assam, FIR against CM Mamata
Published by: Saroj Darbar
  • Posted:August 2, 2018 7:33 pm
  • Updated:August 2, 2018 7:33 pm  

মণিশংকর চৌধুরি, শিলচর: তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সফর নাকি সুপার এমার্জেন্সি!

বৃহস্পতিবার দিনভর যে নাটকের সাক্ষী থাকল শিলচরের কুম্ভীরগ্রাম বিমানবন্দর, তাতে এ প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক৷ জনপ্রিতিনিধিদের আটকে দেওয়া হল বিমানবন্দরের মধ্যেই৷ এমনকী মহিলা নেত্রীদের রীতিমতো হেনস্তার মুখেই পড়তে হল৷ প্রায় অসাংবিধানিকভাবেই একটা ঘরে আটকে রাখা হল মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কদের৷ ফোন সংযোগ বারেবারে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে৷ সাংবাদিকরা ঢুকতে গেলে মারধর করে ক্যামেরা পর্যন্ত ভেঙে দেওয়া হল বলে অভিযোগ৷ তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের অসম সফরকে কেন্দ্র করে রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নিল শিলচর বিমানবন্দর৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয় অন্তত তিনটি জায়গায়। যার জেরে বাংলায় একাধিক জায়গায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ-রেল অবরোধ হয় বলে খবর। সবমিলিয়ে এনআরসি ইস্যুতে কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস।

Advertisement

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার অসমে পা রাখেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল৷ ছিলেন ফিরহাদ হাকিম, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, মহুয়া মৈত্র, রত্না দে নাগ, সুখেন্দুশেখর রায়, নাদিমুল হকের মতো তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা৷ কলকাতা ও দিল্লি থেকে দুই দফায় নেতারা গিয়ে পৌঁছান কুম্ভীরগ্রাম বিমানবন্দরে৷ কিন্তু পৌঁছানোমাত্রই তাঁদের আটক করা হয়৷ বিমানবন্দরে আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়েছিল বিরাট পুলিশবাহিনী৷ তাঁদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন বর্ষীয়ান নেতা সুখেন্দুশেখর রায়৷ তবে তার আগেই ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়৷ রীতিমতো হেনস্তার মুখে পড়েন বিধায়ক মহুয়া মৈত্র ও মমতাবালা ঠাকুর৷ সুখেন্দুশেখর রায় জানান, তাঁর গায়েও হাত পড়েছে৷ তৃণমূলের প্রতিনিধিরা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁরা গৃহহারা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে চান মাত্র৷ কিন্তু নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তাঁদের কোনও কথাতেই কান না দিয়ে আটক করা হয়৷ কেন তাঁদের বাধা দেওয়া হচ্ছে তা জানতে চান তৃণমূল নেতারা৷ পুলিশের বাধা অতিক্রম করে মহুয়া মৈত্র বেরনোর চেষ্টা করলে মুহূর্তের মধ্যে রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা বিমানবন্দর৷ তৃণমূল নেতাদের ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ ওঠে৷ পরে কাকলি ঘোষ দস্তিদার জানান, তাঁদের একটা ঘরে আটক করে রাখা হয়েছে৷ খাবার বা জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি৷ কারও সঙ্গে দেখা করা তো দূর অস্ত, কথা বলতেও দেওয়া হচ্ছে না৷ ফোনের কানেকশন কখনও থাকছে কখনও থাকছে না৷ কোনও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে এরকম ব্যবহার করা হয় না৷ এমনকী এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক তাঁদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করলে তাঁকেও মারধর করে তাঁর ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয় বলে জানান কাকলি৷

অসমে আগুন জ্বালানোর অধিকার নেই তৃণমূলের, বিস্ফোরক দিলীপ ]

কিন্তু তৃণমূল নেতাদের আটকাতে এতটা তৎপর প্রশাসন? অসমের ডিআইজি কুলধর শইকিয়া জানাচ্ছেন, গোটা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা ছিল৷ তৃণমূল নেতাদের বক্তৃতায় এখানে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারত৷ সেই আশঙ্কা করে বুধবার রাতেই তৃণমূল প্রতিনিধি দলকে না আসার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল৷ যদিও সে অনুরোধ না মেনেই তৃণমূল নেতারা সেখানে যান বলেই আটকাতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ, দাবি ডিআইজি-র৷ তিনি জানান, ওঁরা সংসদের সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব৷ তাই ওঁদের প্রথমেই গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ ডিসি ও এডিজি পদমর্যাদার অফিসাররা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চালান বলে পরে জানান তিনি৷ যদিও পুলিশের দাক্ষিণ্য নিতে নারাজ ছিলেন তৃণমূল নেতারা৷ তাঁরা বিমানবন্দরে অবস্থান বসেই এই হেনস্তার প্রতিবাদ করেন৷ আরও পরে ১৫১ ধারায় অভিযোগ এনে তৃণমূল নেতাদের গ্রেপ্তার করে একটি গেস্ট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এফআইআর দায়ের হয় খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেও৷ যা চূড়ান্ত অসংবিধানিক বলে জানান কাকলি ঘোষ দস্তিদার৷ মহিলা পুলিশকর্মীদের জখম করার অভিয়োগে মহুযা মৈত্রের নামেও অভিয়োগ দায়ের হয়৷

[  ‘অসমে বিজেপির মুখোশ খুলে গিয়েছে’, প্রতিনিধিদের আটকানোয় ক্ষুব্ধ মমতা ]

এদিকে অসমে তৃণমূলের আসা নিয়ে গোড়া থেকেই অসন্তুষ্ট ছিল আসু, আটসা, জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদের মতো সংগঠনগুলি৷ বেশ কিছু বাঙালি সংগঠনও তৃণমূলের এই সফরের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ তেজপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়৷ পানবাজার ও নর্থ লক্ষ্মীমপুর থানায় মমতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, দুই ক্ষেত্রেই তদন্ত চলছে৷ পাশাপাশি এদিনই অসমের তৃণমূলের জমিতে রীতিমতো ধস নামে৷ পদত্যাগ করেন অসমের তৃণমূলের রাজ্যকমিটির সভাপতি দীপেন পাঠক৷ সেই সঙ্গে সাধারণ কর্মীরাও গণহারে পদত্যাগ করেন৷ তাঁদের দাবি, এনআরসি প্রসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান তাঁরা সমর্থন করেন না৷ তাই এই দলের হয়ে কাজ করতে নারাজ তাঁরা৷

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement