গৌতম ব্রহ্ম, গোয়া: যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপস না করার কথা বলেন নরেন্দ্র মোদি, এবার সেই দুর্নীতি অস্ত্রেই তাঁকে ঘায়েল করার চেষ্টা শুরু করল গোয়া তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)। ওয়ার্ল্ড আয়ুর্বেদ কংগ্রেস উপলক্ষে রবিবার গোয়ার পানাজিতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি (Narendra Modi)। তার আগেই গোয়া সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হলেন তৃণমূল নেতা তথা বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেট দলের সদস্য কীর্তি আজাদ।
রবিবার পানাজিতে কলা অ্যাকাডেমি সংলগ্ন মাঠে মোদির অনুষ্ঠান। তার এক কিলোমিটারের মধ্যেই আত্মারাম বর্কার রোডের নিজমার সেন্টারে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সদর দপ্তর। সেখানে বসেই শুক্রবার গোয়ার বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক ইয়র্কার দিলেন কীর্তি। জানালেন, “ধর্মস্থানের জমি দখল, সরকারি জমি দখল, ধর্ষণ-সহ একাধিক অভিযোগে বিদ্ধ গোয়ার একাধিক মন্ত্রী। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী রবিবারের অনুষ্ঠান থেকে এই সব অভিযোগের উত্তর দেবেন।”
আসলে, গত বিধানসভা ভোটে প্রথমবার লড়েই গোয়ায় সাড়া জাগিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। আসন না পেলেও এবার পঞ্চায়েত ভোটে একটি আসনে জয়লাভ করেছে তৃণমূল। সঙ্গিম তালুকে সাধারণ কৃষিজীবী মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজসেবা করে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তৃণমূলের রাখি নায়েক। এ দিন কীর্তি আজাদের সঙ্গে দেখা করতে তিনিও এসেছিলেন পনাজির অফিসে। মেডিক্যাল ক্যাম্প করে ২৫০ লোককে বিনামুল্যে চশমা দিয়েছেন। ৫০ জন লোকের ছানি অপারেশন করিয়েছেন আট দিন ধরে। খেটে খাওয়া গরীব কৃষিজীবী মহিলাদের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন রাখি। তিনি জানালেন, এখন নির্বাচন হলে আমার তালুকের আশপাশের মানুষও তৃণমূলকে ভোট দেবেন।
একই কথা বললেন গোয়া তৃণমূল কংগ্রেসের জয়েন্ট কনভেনর সামিল ওয়েলিকার। কম্বারদুয়া কেন্দ্র থেকে ভোটে করেছিলেন সামিল। জানালেন, দুর্নীতির অভিযোগ গোয়া মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে। আতানাসিও মনসেরাত নামে একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে দেহ লোপাট করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হাই কোর্টে কেস চলছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি দখল করে এক মন্ত্রী বাংলো বানিয়েছেন, এমন অভিযোগ উঠেছে। এই সব অভিযোগ সামনে রেখেই জানুয়ারি থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নিয়েছে গোয়া তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিন থেকেই গোয়ায় ‘মোদি মিন্স করাপশন’ শীর্ষক একটি প্রচারাভিযান চালাবে তৃণমূল।
শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেসের একজন রাজ্যস্তরের নেতাও নাকি শিঘ্রই যোগ দেবেন তৃণমূলে। তৃণমূল বলছে, বিরোধী হিসাবে গোয়াতে কংগ্রেসের আর কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। মানুষ বিকল্প খুঁজছে। বারবার বিজেপিকে হঠাতে কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে ঠকেছে গোয়াবাসী। মাস ছ’য়েক আগে বিধানসভা নির্বাচনে গোয়ায় প্রধান বিরোধী হিসাবে কংগ্রেসকেই বেছে নিয়েছিলেন সাধারণ ভোটাররা। ৪০ আসনের বিধানসভায় কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক নির্বাচিত হন ১১ জন। কিন্তু পরে দেখা গেল রাজ্যস্তরের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা-সহ প্রায় গোটা কংগ্রেস পরিষদীয় দলটাই মিশে গিয়েছে বিজেপিতে। সেরাজ্যে কংগ্রেস এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিজেপি বিরোধী ইমেজকে কাজে লাগাতে চাইছেন কীর্তি আজাদরা। তাঁদের দাবি, কংগ্রেস নিয়ে মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। মানুষ বিজেপির বিকল্প চাইছে। যা হয়ে ওঠার ক্ষমতা শুধু তৃণমূলের আছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.