সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: এক্কেবারে শেষ মুহূর্তে বিপথে যাওয়া থেকে তিন কাশ্মীরি যুবককে রক্ষা করল যৌথবাহিনী। পুলওয়ামা জেলার ত্রাল এলাকায় বাড়ি তিন যুবকের। এক সময় কাশ্মীরি যুব সম্প্রদায়ের কাছে সন্ত্রাসবাদের ‘পোস্টার বয়’ বুরহান ওয়ানির বাড়িও ত্রালে। বুরহানের প্রধান কাজ ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে স্থানীয় যুব সম্প্রদায়ের মগজ ধোলাই করে সন্ত্রাসবাদীদের দলে নাম লেখানো। বুরহান শেষ হলেও, থামেনি সন্ত্রাসবাদীদের এই কাজ। ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা বিভাগ মারফত যৌথবাহিনীর কাছে খবর এসেছে যে, জম্মু-কাশ্মীরে নতুন করে সংগঠন তৈরির কাজ করছে জইশ-ই-মহম্মদ, আইএসআই-এর মতো সংগঠন। সেই সূত্র ধরেই শনিবার সকালে অবন্তিপোরা পুলিশের কাছে খবর আসে যে, তিন স্থানীয় নাম লেখাতে চলেছে হিজবুল মুজাহিদিন-এ। সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয় যৌথবাহিনী।
একটি দল তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে, অন্য দল সরাসরি পৌঁছে যায় তিন যুবকের কাছে। মনদুরা গ্রামের ইলিয়াস আমিন ওয়াইনি ও আবরার আহমেদ রেশি এবং শালদ্রামান গ্রামের উবেদ আহমেদ শাহকে নিয়ে যাওয়া হয় অবন্তিপোরা থানায়। সেখানে তাদের অভিভাবকদের সামনে কথা বলে, বুঝিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত বদল করাতে সফল হন যৌথবাহিনীর জওয়ানরা। প্রত্যেকের মা-বাবাও নিজেদের মতো করে বোঝান তিনজনকে। তাদের ভুলপথে চালিত করার অপরাধে অন্য দুই স্থানীয়কে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
যে তিনজন আরেকটু হলেই সন্ত্রাসবাদীদের দলে নাম লিখিয়ে ফেলছিল, তাদের মধ্যে সবথেকে বড় যে তার বয়স ২১ বছর। কনিষ্ঠতমটি এখনও নাবালক। বয়স ১৭। মাঝেরটি ১৯ বছর বয়সী। যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারাও ত্রালের বাসিন্দা। রিজওয়ান আহমেদ ওয়ানি ও রইস আহমেদ চোপানের প্রধান কাজ হল, হিজবুল ও জইশ সন্ত্রাসবাদীদের খাদ্য, পানীয়, বাসস্থান-সহ অন্যান্য জিনিস ক্রমাগত সরবরাহ করে যাওয়া। তিন যুবকের মাথা থেকেই ভারত ও ভারতীয় সেনা বিরোধী বিদ্বেষ বার করা গিয়েছে বলেই দাবি যৌথবাহিনীর। সমাজের মুলস্রোতে থাকতে তিনজনকেই পর্যাপ্ত সাহায্যের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য বিপথে যাওয়া স্থানীয়দের সমাজের মুলস্রোতে ফেরানোর কাজ দীর্ঘদিন ধরেই করে আসছে সেনা। বাড়ির লোক, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে তাদের বুঝিয়ে মাথার নোংরা পরিস্কার করা নিরাপত্তারক্ষীদের অন্যতম কাজের অঙ্গ। এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশও দিয়ে রেখেছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান ও দেশের প্রথম তথা বর্তমান চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত। তাঁর নির্দেশ, “বিভিন্ন উপায়ে বারবার বুঝিয়ে সমাজে ফেরত আনতে হবে স্থানীয়দের। কিন্তু তারপরও কেউ যদি না শুনে গুলি চালায় বা সন্ত্রাসবাদী কাজে জড়িত থাকে, তখন আমাদের একটাই কাজ। সেই ব্যক্তি ও তার বন্দুককে আলাদা করে ওই মানুষকে কবরে আর বন্দুক নিজেদের গুদামে পাঠানো।”
এদিকে শুক্রবার মাঝরাতে আরও একবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে জম্মুর কাঠোয়া জেলার আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় গুলি চালায় পাকিস্তান সেনা। পাল্টা প্রতিরোধ করে বিএসএফ-ও। রাত পৌনে একটা থেকে ভোর তিনটে পর্যন্ত চলে দু’পক্ষের গোলাগুলি। ভয়ে-আতঙ্কে মাটির নিচের বাঙ্কারে সারারাত কাটান স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তবে শুক্রবার সন্ধে পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর মেলেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.