সুব্রত বিশ্বাস: বাড়ি ফিরতে শ্রমিক সেজে বেঙ্গালুরু থেকে রাজস্থানের কোটা পৌঁছলেন তিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া। মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ ট্রেনটি লাল সিগন্যাল দেখে কোটার আগে দাঁড়িয়ে পড়ে। ট্রেন থেকে এক যুবতী ও দুই যুবককে নামতে দেখে সন্দেহ হওয়ায় আরপিএফ তাঁদের পাকড়াও করে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তাঁরা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া। বেঙ্গালুরু থেকে ফিরতে পারছিলেন না। এরপর শ্রমিক সেজে নাম নথিভুক্ত করিয়ে শ্রমিক ট্রেনে চড়েন। আরপিএফ তিন পড়ুয়াকে জিআরপির হাতে তুলে দেয়। জিআরপি তিনজনকে করোনা কন্ট্রোল টিমের হাতে তুলে দেয়। কোটা অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় তাঁদের বাড়ি হওয়ায় পরিবারের লোকজন সেখানে চলে আসেন। এরপর তিনজনকে হোম কোয়ারান্টাইনে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ১২০০ শ্রমিক নিয়ে বৃহস্পতিবার বিহারের ভাগলপুরে পৌঁছেছে শ্রমিক ট্রেন। পূর্ব রেলের মালদহ ডিভিশনের আওতায় ট্রেনটি এলেও সব শ্রমিক ছিলেন বিহারবাসী। রাজ্যের কোনও শ্রমিক এদিন ছিলেন না। এদিকে সোনিয়া গান্ধী শ্রমিকদের ট্রেন ভাড়া মেটানোর নির্দেশের পর কংগ্রেস পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হল। এদিকে, বিহারের ১২০০ শ্রমিককে মহারাষ্ট্র থেকে ফেরানোর জন্য ট্রেনের ভাড়া মেটাল কংগ্রেস। মহারাষ্ট্রের মিরাভাইডার জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব এই ভাড়া মেটানোর ব্যাপারটি তদারকি করে। মহারাষ্ট্র প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি মুজফফর হুসেন যাবতীয় বন্দোবস্ত করেন। ১২০০ শ্রমিক বিহারে যাওয়ার জন্য ট্রেনে রওনা করিয়ে দেন। গুজরাত থেকে রায়বরেলিতেও একটি শ্রমিক ট্রেন পৌঁছেছে। রেলের তরফে জানানো হয়েছে, নির্ধারিত কিছু নিয়মের মধ্যে দিয়ে চলছে ট্রেনগুলি। যাতে বিভিন্ন রাজ্যের আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকরা বাড়িতে ফিরতে পারেন। দুই রাজ্যের মধ্যে কথার পর প্রোটোকল মেনে শ্রমিকদের ফেরানো হচ্ছে। নির্ধারিত বিষয় মেনে রেজিস্টারের পর নাম নথিভুক্ত হলে তবেই স্টেশনে ঢুকতে পারবেন শ্রমিকরা। দেশের নানা প্রান্ত থেকে শ্রমিকরা বিভিন্ন রাজ্যে ফিরছেন। তবে এই মুহূর্তে হাওড়ায় শ্রমিকদের নিয়ে কোনও ট্রেন আসার কথা নেই বলে জানান ডিআরএম ইশাক খান।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়েছেন কয়েক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক। সরকার তাঁদের ফেরাবার জন্য কয়েকটি ট্রেন চালু করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এহেন পরিস্থিতিতে অনেকেই বিভিন্ন রাজ্য থেকে নিজের রাজ্যে পায়ে হেঁটে ফিরছেন। মাঝপথেই অনাহারে ও পথশ্রমে মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজন শ্রমিকের। শুক্রবার মহারাষ্ট্রে এমনও এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। মালগাড়ির ধাক্কায় ১৫ জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে। ঔরঙ্গাবাদ পুলিশ সূত্রে খবর, পেশার টানে কড়মড এলাকায় গিয়েছিলেন তাঁরা। লকডাউন চলায় রেললাইন ধরে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। মনে করা হচ্ছে, হাঁটতে হাঁঠতে ক্লান্ত হয়ে রেল ট্র্যাকের উপরই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। শুক্রবার ভোর ৫টায় মালগাড়ির ধাক্কায় তাঁদের মৃত্যু হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.