ছবি: প্রতিবেদক
মণিশংকর চৌধুরি, গুয়াহাটি: ১৯৮৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির সেই বিভীষিকাময় সকালটা মনে পড়লে আজও আতঙ্কিত হন নেলির বাসিন্দারা। এক লহমায় পালটে গিয়েছিল চেনা পরিবেশটা। ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন নাগাঁও জেলার খুলাপাথর, বসুন্ধরী, বুগডুবি বিল, বোরজুলা, ভুতুনি, ডোঙ্গাবোরি, নেলির স্থানীয়রা। সেদিন বঙাল খেদাও অভিযানে প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু মানুষ। সেসব আজ অতীত। কিন্তু আতঙ্ক কাটেনি। তাই বলে কি বাঁচা ছেড়ে দেওয়া যায়? হাত গুটিয়ে বসে অদৃষ্টকে দুষলে তো আর জীবনের সংজ্ঞা বদলে ফেলা যায় না। তাই পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে রক্তাক্ত নেলিতেই সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার অসম্ভব প্রয়াস করে চলেছেন নেলির স্থানীয় বাসিন্দা ফরিদা খাতুন। স্কুলে শিশুদের পড়িয়ে গ্রামে শিক্ষার আলো জ্বালাতে চাইছেন তিনি।
[স্বাধীনতা দিবসের আগেই পুলিশের জালে জঙ্গি, উদ্ধার গ্রেনেড ও নগদ টাকা]
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৩ সালের সেই ভয়ংকর দিনে ১৪ টি গ্রামে বঙাল খেদাওয়ের নামে গণহত্যা চলেছিল। প্রায় ২২০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল। বেসরকারি হিসেবে যে সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছিল। ঘটনার সূত্রপাত সে বছর বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। তথ্য অনুযায়ী, ৪০ লক্ষ বাংলাদেশিকে ভোটারাধিকার দিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তারপরই উত্তপ্ত হয় অসমের ওই এলাকা। পুলিশ জানিয়েছিল, হিংসা এড়াতে অসমের ২৩টি নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। যার মধ্যে ছিল নেলিও। বাকি ৬৩টি কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনী ও ভারতীয় সেনা মোতায়েন করে নির্বাচন হয়। কংগ্রেসের আমলে সেই বঙাল খেদাও অভিযানেই প্রাণ গিয়েছিল ফরিদা খাতুনের পরিবারের ন’জন সদস্যের। সেই আতঙ্ক তাঁকে আজও তাড়া করে বেড়ায়। হিংসার পরিবেশ শান্ত হলেও সামাজিক অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফরিদা বলছেন, সরকার এই গ্রামের উন্নতির কথা এখনও ভাবে না। না আছে স্কুল, না হাসপাতাল। জলের ব্যবস্থাও তথৈবচ। তাই রোজ বাঁচার জন্য লড়াই করতে হয়।
নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসার সামলাতে গত দশ বছর ধরে শিশুদের স্থানীয় স্কুলে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন ফরিদা খাতুন। জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে নাম রয়েছে তাঁর। কিন্তু তাঁর পরিবারের সবার নাম নেই। আক্ষেপের সুর ফরিদার গলায়। বলছেন, “মুসলমানরাই তালিকা থেকে বেশি বাদ পড়েছেন।” জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে দ্বিতীয় খসরায় যাদের নাম আসেনি, তাদের কী করতে হবে, কোন নথিপত্র জমা দিতে হবে, আগামী ১০ আগস্ট থেকে পার্শ্ববর্তী এনআরসি সেবা কেন্দ্রে গিয়ে সমস্ত তথ্য জানতে পারবেন তাঁরা।
একসময় রাজনীতির রং ফরিদা খাতুনের পরিবারকে সাদা-কালো করে দিয়েছিল। এবার নিজভূমেই পরবাসী হওয়ার আতঙ্কে ভুগতে হচ্ছে তাঁর পরিবারকে। তবে দু’চোখে স্বপ্ন রয়েছে। সবকিছু স্বাভাবিক হওয়া স্বপ্ন। বাকি প্রদেশের বাসিন্দাদের মতোই তাঁরাও নিশ্চিন্তে বাঁচবেন। আর ভোটবাক্স ভরতে অন্তত সরকার তাঁদের কথা ভাববেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.