সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৭ মাসের এক অসম লড়াই৷ ভাগ্যিস দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের মাটি কামড়ে পড়েছিলেন৷ তাই আজ সাফল্যের স্বাদ এত মধুর৷ কাঠুয়ার শিশুধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষী ৬ জনের মধ্যে ৩ জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে৷ আর এটাই আইনজীবী দীপিকা সিং রাজওয়াতের সাফল্য৷ সাজা পাইয়ে দেওয়ার নেপথ্যে যে এনার অবদানই সবচেয়ে বেশি৷
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে জম্মুর কাঠুয়ায় ৮ বছরের মেয়েকে গণধর্ষণের পর খুন করা হয়৷ ঘটনা জানাজানি হতেই দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে৷ সংখ্যালঘু পরিবারের বাচ্চার এমন এক মর্মান্তিক পরিণতিতে ঘটনায় অন্য রং লাগতেও খুব একটা সময় লাগেনি৷ নেটদুনিয়ায় এর সুবিচারের দাবিতে তৈরি হয় একাধিক পেজ৷ এসব দেখে আর ঘরে বসে থাকতে পারেননি পেশায় আইনজীবী তরুণী দীপিকা সিং রাজওয়াত৷ তাঁর কথায়, ‘এমন ঘটনার কথা শুনেও যদি চুপ করে বসে থাকতাম, তাহলে নিজের পেশার কাছে, বিবেকের কাছে কী জবাব দিতাম?’ দীপিকা তাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কাঠুয়া কাণ্ডের মামলা নিজের হাতে নিয়েছিলেন৷
এক কন্যার মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে আরেক মহিলার হস্তক্ষেপ, আইনি লড়াইয়ের পথে হাঁটা৷ স্বভাবতই খুব সহজভাবে গৃহীত হয়নি বিষয়টি৷ পদে পদে বিরোধিতা আর প্রতিকূলতার মুখে পড়তে হয়েছে তরুণী আইনজীবীকে৷ দীপিকা জানাচ্ছেন, স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিভিন্নভাবে কুকীর্তির প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছেন৷ সেইসঙ্গে আইনি লড়াই থেকে পিছিয়ে আসার জন্য গরিব পরিবারটির উপর তৈরি হয়েছিল প্রবল সামাজিক চাপ৷ তবে তিনি সাহস হারাননি, পিছুও হঠেননি৷ নিজের মতো করে প্রতিরোধ গড়ে, সংবিধান হাতে নিয়ে চালিয়ে গিয়েছেন আইনের যুদ্ধ৷ কারণ, তাঁর অগাধ ভরসা ছিল ভারতীয় বিচারব্যবস্থার উপর৷ আত্মবিশ্বাস ছিল, ঠিক পথেই এগোচ্ছেন তিনি৷ এমনকী ওই সংখ্যালঘু পরিবারের পাশে দাঁড়ানোয় ‘দেশদ্রোহী’ তকমাও জুটেছে দীপিকা সিং রাজওয়াতের৷
সোমবার সেই দীর্ঘ সংগ্রামী লড়াই সাফল্যের মুখ দেখল৷ হাজার প্রতিকূলতা, অপমানকে পাশ কাটিয়ে নিজের পথে হেঁটে দীপিকা কাঠুয়ার নাবালিকাকে সুবিচার পাইয়ে দিলেন৷ তাঁর হাত ধরেই দোষীরা যথাযথ শাস্তি পেল৷ আর এই সাফল্য তাই দীপিকার কাছে এক বিশেষ ব্যাপার৷ এতদিনে তিনি নিজেকে সবচেয়ে বেশি সফল মনে করছেন৷ এই সাফল্যের কৃতিত্ব অবশ্য তিনি একাই নেননি৷ তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া ক্রাইম ব্রাঞ্চের আধিকারিকদেরও শামিল করেছেন এই সাফল্যের কাণ্ডারী হিসেবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.