সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আধুনিকাদের এমনিই অনেক দুর্নাম। পুরনোপন্থীরা চায় মেয়ে মানেই চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থাকবে। লাজুক হবে। অধিকার আবার কী? মেয়ে হয়ে জন্মেছ। সীমারেখার মধ্যে থাক। তবেই না লক্ষ্মী? সেখান থেকে একটু বেরোতে গেলেই বিপদ। সমাজ চোখ পাকাবে। আর নিজের অধিকার চাইতে গেলে তো কুরুক্ষেত্র হওয়াটাই শুধু বাকি থাকে। মোড়লরা এমন সর্বনাশা অনুমতি কক্ষনও দেয় না। সমাজ তো দূরের কথা। অনেকের বাড়িতেও এটা ‘সম্মান’-এর প্রশ্ন। মেয়ে আধুনিকা হলেই বংশের মুখে আপনা থেকেই অদৃশ্য চুলকালি লেপে যায়। তাই আধুনিকা হলেও সমঝে চলতে হয় মেয়েদের। পা ফেলতে হয় বুঝেশুনে। ব্যালেন্স করতে হয় খুঁটিনাটি বিষয়ের সঙ্গে। শুধু একটাই স্বস্তি। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতরা এর মর্ম বোঝে। তা সে পুরুষই হোক বা মহিলা। শিক্ষা সত্যিই অচলায়তনের উত্তরদিকের জানালা খুলে দেয়। কিন্তু যদি এমন ‘শিক্ষিত’-দের মুখে নিজেদের অন্যায্য নিন্দা শোনা যায়, তা কাঁহাতক সহ্য করা যায়?
[ খুদে পড়ুয়াদের হোমওয়ার্কের বোঝা নয়, নির্দেশ মাদ্রাজ হাই কোর্টের ]
অবস্থা এখন এমনই। আইসিএসই, আইএসসি, সিবিএসসি বোর্ডের পাঠ্যবইয়ে ‘মর্ডান গার্ল’ বা আধুনিকা সম্পর্কে এমনই একটি রচনা প্রকাশ পেয়েছে। সেখানে যা লেখা আছে, তা পড়ে মেয়েরা তো বটেই পুরুষরাও হতভম্ব। বইয়ে আধুনিকাদের সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে, তা খানিকটা এইরকম-
‘মর্ডার্ন গার্ল’-রা সাধারণত স্মার্ট, বুদ্ধিমতী ও ফ্যাশনেবল হয়।… তারা জিনস, প্যান্ট ও হটপ্যান্ট পরতে পছন্দ করে। ‘মর্ডার্ন গার্ল’-দের পোশাকে রঙিন শাড়ির কোনও জায়গা নেই। তারা ফিল্ম ও টেলিভিশন দেখে সেই হেয়ার স্টাইল নকল করার চেষ্টা করে।…. এরা লাজুক হয় না। বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে এরা নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখে না। নিজেদের অধিকার দাবী করে। ছেলেদের মতো করে এরা জীবন কাটাতে চায়।… কোনও পার্টি, সিনেমা, কনসার্ট, ফ্যাশন প্যারেড এরা মিস করতে চায় না।… ইত্যাদি ইত্যাদি।
[ বুরারির ছায়া এলাহাবাদে, বন্ধ বাড়িতে উদ্ধার একই পরিবারের ৫ সদস্যের দেহ ]
এসব পড়ে সত্যযুগকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকা, উচিত-অনুচিতের পাঠ দেওয়া ‘দাদু’-রা হয়তো আড়ালে মুচকি হাসছেন। কিন্তু আধুনিকা তো বটেই, আধুনিক পুরুষরাও এসব মেনে নিতে পারছেন না। ফেসবুকে ছবিটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে সমালোচনা। কেউ তো এমনও লিখছেন, “ভাগ্যিস আমি এতো শিক্ষিত নই”। আর বলবেন নাই বা কেন। এই রচনার যিনি রচয়িতা তিনি তো নিজেই বড় বড় ডিগ্রিধারী ব্যক্তি। ইংরেজি ভাষায় তিনি মাস্টার্স। এছাড়া বিএড ও ডিলিট রয়েছে তাঁর ভাঁড়ারে। সর্বোপরি তিনি নিজে একজন মহিলা। নাম পূরবী চক্রবর্তী। একজন শিক্ষিত মহিলা হয়ে এই একবিংশ শতকে বসে নারী স্বাধীনতা বা নারীর অধিকারকে আপাদমস্তক ভুলভাবে ব্যখ্যা করেন কীভাবে?
প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু জবাব দেবে কে? লেখিকা বোধহয় লিখে দিয়েই তাঁর দায়িত্ব সেরেছেন। প্রকাশনা সংস্থা বই প্রকাশ করেছে। সমাজের উঁচুপদে আসীন যাঁরা, তাঁরা তো এই শিক্ষাই দিতে চায়। তাহলে প্রতিবাদ করবে কারা? সঠিক পাঠ দেবে কে? দায়িত্বটা বোধহয় এবার সোশাল মিডিয়াকেই নিতে হবে।
[ বন্যা দুর্গতদের জন্য পিঠ পেতে যুবক, ভাইরাল কেরলের ভিডিও ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.