সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হায়দরাবাদ গণধর্ষণ কাণ্ডে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে চার অভিযুক্তর। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলার চেষ্টা করাতেই পালটা গুলি চালানো হয়। আত্মরক্ষার স্বার্থেই এই এনকাউন্টার। হায়দরাবাদ পুলিশের এমন কাজের অনেকেই প্রশংসা করলেও, কেউ কেউ এনকাউন্টারের বিরোধিতাও করেছেন। তবে পুলিশের দাবি, আইন মেনেই হয়েছে এনকাউন্টার। প্রশ্ন হল, আইনে ঠিক কী রয়েছে? ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, কোনও পুলিশি এনকাউন্টার হলে ১৬টি বিষয় সামনে আসে। এনকাউন্টার নিয়ে সম্পূর্ণ তদন্তও করা হয়। কী কী রয়েছে গাইডলাইনে?
১. পুলিশ যদি অপরাধের কোনও ইঙ্গিত পায়, সেক্ষেত্রে তার লিখিত প্রমাণ রাখতে হবে। অথবা রেকর্ড করে রাখতে হবে। রেকর্ডিংয়ের তথ্যে সন্দেহভাজনের নাম বা এলাকা প্রকাশ্যে আনার প্রয়োজন হয় না। উচ্চস্তরে এমন খবর পৌঁছলেও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
২. যদি এনকাউন্টারে পুলিশ কোনও আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োগ করে থাকে এবং তাতেই অভিযুক্তের মৃত্যু হয়, সেক্ষেত্রে এনকাউন্টারের এফআইআর করতে হয়। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৭ নম্বর ধারায় তা আদালতের কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়। গোটা প্রক্রিয়ায় ১৫৮ নম্বর ধারা মেনে চলাই নিয়ম।
৩. এনকাউন্টার বা এমন কোনও ঘটনা ঘটলে সিআইডি বা অন্য থানার উচ্চপদস্থ আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে পুলিশের দল তার তদন্ত করে। এনকাউন্টারে নিহতের নাম পরিচয়, ঘটনাস্থল, মৃতদেহের ময়নাতদন্ত, এনকাউন্টারের কারণ-সহ বেশ কিছু বিষয় খতিয়ে দেখা হয়।
৪. এক্ষেত্রে ১৭৬ নম্বর ধারায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা হয়। বিচারপতির কাছে রিপোর্ট পেশ করা হয়।
৫. তদন্ত সন্দেহের অবকাশ থাকলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে যুক্ত করা হয়। নতুবা নয়। যদিও ঘটনার সমস্ত তথ্য তাদের জানানো হয়।
৬. এনকাউন্টারে আহতের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়। মেজিস্ট্রেট আহতের বয়ান নেন।
৭. এমন ঘটনায় অবিলম্বে এফআইআর করা বাধ্যতামূলক।
৮. ঘটনার তদন্তের পর, আদালতে রিপোর্ট পাঠানো হয়। তদন্তকারী আধিকারিককে দ্রুততার সঙ্গে চার্জশিট তৈরি করতে হয়।
৯. এনকাউন্টারে নিহতের পরিবারকে যত শীঘ্র সম্ভব খবর দিতে হবে।
১০. এনকাউন্টারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে ছ’মাসে একবার করে সেসব ঘটনার তথ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জানাতে হবে। কিছু বিশেষ নিয়ম মেনে তা পাঠানো হয় জানুয়ারি ও জুলাইয়ের ১৫ তারিখে।
১১. তদন্তের পর যদি দেখা যায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ভারতীয় দণ্ডবিধির নিয়মকে লঙ্ঘন করেছে, সেক্ষেত্রে সেই আধিকারিকের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়। সাসপেন্ড করাও হতে পারে তাকে।
১২. ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৭-এ ধারা মেনে নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
১৩. ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য এনকাউন্টারে ব্যবহৃত অস্ত্র অথবা অন্য সরঞ্জাম পুলিশকে দিয়ে দিতে হয়। তদন্তকারীরা তা খতিয়ে দেখে।
১৪. পুলিশের পরিবারকেও ঘটনার খবর দিতে হয়। তাদের আইনজীবীর প্রয়োজন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়।
১৫. ঘটনার পরই এর সঙ্গে জড়িত কোনও পুলিশ কর্মীকে পুরস্কৃত করা হয় না। সমস্ত সন্দেহের অবকাশ ঘটার পরই তিনি সম্মানিত হন।
১৬. আহত বা নিহতের পরিবার মনে করলে তদন্তের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.