সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মৃত্যুর পর সরকার তাঁকে শহিদের মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু জীবনের প্রতি বাঁকে তাঁর বীরত্বের সাক্ষী থেকেছেন হুইলচেয়ারে বসা জীবনসঙ্গিনী। প্রেম পর্বেই দুরারোগ্য অসুখ স্থবির করে দেয় প্রেমিকাকে। কিন্তু তাতেও তাঁর হাত ছাড়েননি। কারণ জীবনে ও কর্মক্ষেত্রে তিনি যে ক্যাপ্টেন।
শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীরের রাজৌরি জেলার নওসেরা সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাক সেনার পাতা আইইডি বিস্ফোরণে শহিদ হন শশীধরণ ভি নায়ার। একই সঙ্গে শহিদ হন আরও এক জওয়ান গুরুং। রবিবার সামরিক মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করে মহারাষ্ট্র সরকার। এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে আসে তাঁর জীবনের আসল বীরগাঁথা। চাকরির স্বার্থে শুধু যুদ্ধক্ষেত্র নয়, জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই তাঁর ‘হিরোইজমে’র গল্প বললেন বন্ধু, পরিচিত, সর্বোপরি জীবনসঙ্গিনী। পুণের খাদাকওয়াসলায় বসবাসের সূত্রে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির কর্মকান্ড খুব কাছ দেখার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। সেখান থেকেই বড় হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা মনের কোনায় বাসা বাঁধতে থাকে। স্কুলের পাঠ শেষ করে ফার্গুসন কলেজে ভর্তি হন। কলেজ শেষ করে যোগ দেন এনসিসি-তে। হঠাৎই একদিন এক বন্ধুর বাড়িতে ২৭ বছরের ক্যাপ্টেন শশীধরণের সঙ্গে দেখা হয় ২৬ বছরের ত্রুপ্তির। প্রথম দেখাতেই প্রেম। ত্রুপ্তি তখন এমসিএ শেষ করেছেন। প্রথমে প্রেমের পথ খুব মসৃণ ছিল না। কারণ দু’জনে ভিন জাতের। কিন্তু তাতে কী। প্রেম ও যুদ্ধক্ষেত্রে শশীধরণ যে বীর নায়ক। প্রেমের ছ’মাসের মধ্যেই তাঁদের বাগদান পর্বও মিটে যায়। এরপর আসে চরম ধাক্কা। দুরারোগ্য অ্যাথরোস্কেলেসিসে আক্রান্ত হন ত্রুপ্তি। স্ট্রোকে হাঁটাচলার ক্ষমতা চলে যায়। বন্ধুবান্ধব, পরিজনরা সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও তা কানে তোলেননি শশীধরণ। এর কয়েকমাসের মধ্যেই হুইলচেয়ারে বসা ত্রুপ্তিকে বিয়ে করেন তিনি। এরপরেও কয়েকবার স্ট্রোকে প্রায় স্থবীর হয়ে গিয়েছেন ত্রুপ্তি। কিন্তু বরাবরের জন্য পাশে থেকেছেন শশীধরণ।
নেহাত কর্তব্য নয়। তাঁর কথায় ত্রুপ্তিই তাঁর প্রথম ও শেষ প্রেমিকা। তাই পার্টি, রেস্তোরাঁ সর্বত্রই সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। অবশেষে প্রতিবেশী দেশের আক্রমণে সেই বাঁধন ছিঁড়ে গেল। কিন্তু তাতে কী? মৃত্যু তাঁর শরীরী উপস্থিতি কেড়ে নিলেও এখনও প্রেমের স্পর্শ অনুভব করেন ত্রুপ্তি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.